ডায়াবেটিস হল একটি দীর্ঘকালীন শারীরিক অবস্থা যেখানে আমাদের দেহে সঠিকভাবে ইন্সুলিন উৎপাদন হয় না অথবা উৎপাদিত ইন্সুলিন কে শরীর ঠিকঠাক মতো ব্যবহার করতে পারে না ।
দৈনন্দিন জীবনে বেঁচে থাকা এবং সঠিকভাবে কাজকর্ম চালিয়ে যেতে গেলে প্রয়োজন শক্তির । আর আমাদের শক্তির চাহিদার বেশীর ভাগই পুরন করে শর্করা ( Carbohydrate ) । হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যে উপস্থিত শর্করা গ্লকুজে পরিনত হয় এবং সেই গ্লকুজ রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয় সারা দেহে পৌছায় এবং সেখান থেকে ইন্সুলিন হরমোনের সহায়তায় গ্লকুজ কোষে প্রবেশ করে । এখন কনও কারনবসত যদি ইন্সুলিনের ক্ষরণ বাধা প্রাপ্ত হয় অথবা আমাদের শরীর ইন্সুলিন কে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে না পারে তখন রক্তে গ্লকুজ ( শর্করা ) এর পরিমান বেড়ে গিয়ে যে শারীরিক অবস্থার সৃষ্টি করে তাকে ডায়াবেটিস মেলিটাস বা মধুমেহ বলা হয় । ২০০৬ এর ২০ ডিসেম্বর ডায়াবেটিস কে জাতিসংঘ বিশ্বের দীর্ঘ মেয়াদি ও ব্যয়বহুল ব্যধি বলে চিহ্নিত করেন ।
ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে স্থুলতা এবং অস্বাস্থকর জীবনযাপন ডায়াবেটিস এর সংখ্যা বাড়াতে ইন্ধন যোগায় । ২০১৯ এর এক জার্নালে প্রকাশ ভারতবর্ষে ৭৭ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে এবং ২০৪৫ পর্যন্ত তা ১৩৪ মিলিয়ন হবার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যাই বেশী ।
বিভিন্ন প্রকারের ডায়াবেটিস
বিভিন্ন প্রকারের ডায়াবেটিস রয়েছে যেমন –
- টাইপ – ১ ডায়াবেটিস বা ইন্সুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস ।
- টাইপ – ২ ডায়াবেটিস বা নন-ইন্সুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস ।
- গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস
টাইপ – ১ ডায়াবেটিস বা ইন্সুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস
এটি শিশু এবং কিশোর বয়সীদের খেত্রে বেশি দেখা যায় , তবে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যেও টাইপ -১ ডায়াবেটিস হয় । এই রকমের ডায়াবেটিস এ অগ্নাশয়ের বিটা কোষ থেকে খুব কম পরিমানে ইন্সুলিন ক্ষরণ হয় অথবা একদম হয় না । সেই কারনে রক্তে শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রন করতে টাইপ -১ ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন ইন্সুলিন ইঞ্জেকশনের দরকার হয় ।
টাইপ – ২ ডায়াবেটিস বা নন-ইন্সুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস
সাধারনত অতিরিক্ত ওজন সম্পন্ন ব্যক্তি ( Overweight Or Obese Person ) এবং ৪০ বছর বয়েসের পর এই রকমের ডায়াবেটিস দেখা দেয় । এই রকমের ডায়াবেটিস এ অগ্নাশয়ের বিটা কোষ থেকে ইন্সুলিন ক্ষরণ নরমাল থাকে বরং কখনো কখনো বেশি থাকে ।
গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস
যখন গর্ভবতী মহিলা ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হন তখন একে গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বলা হয় । এটি সুধুমাত্র শতকরা ১% গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় ।
ডায়াবেটিস এর লক্ষন
- রাতে বার বার প্রস্রাবের বেগ আসা ।
- ওজন কমতে থাকা ।
- মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা হওয়া ।
- ঘনঘন খুদা লাগা এবং ক্লান্তি অনুভব করা ।
- মুখ শুকিয়ে জাওয়া ।
- ঘনঘন পিপাসা লাগা ।
- মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া।
- মনঃসংযোগের অভাব দেখা দেওয়া ।
- একটুতেই উত্তেজিত হওয়া বা মন খারাপ হয়ে যাওয়া ।
- চোখের দৃষ্টি শক্তি কমতে থাকা ।
আরও পড়ুন – ডায়াবেটিসের ৫টি সেরা খাবার জেনে নেওয়া আবশ্যক