httpsnutrituonbangla.com

হার্টের বিভিন্ন প্রকার অসুখ – এর কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা

বর্তমান সময়ে হৃদরোগে মৃত্যুর হার দিন দিন বেড়ে চলেছে ভারতে। এটি সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করার ওষুধ, পদ্ধতি এখনো অজানা। আজকাল বয়সের কোনো সময় সীমাই মানে-না হৃদরোগ যেন মন চাইলেই হাজির হয়।

চলুন আজকের আলোচনায় জেনে  নিই হৃদরোগ সম্পর্কে বিস্তারিত।

বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ

সৃষ্টির  কারণ অনুসারে হৃদরোগকে বিভিন্ন ধরনে পৃথক করা হয়েছে।

  • Arrhythmia (অ্যারিথমিয়া): অ্যারিথমিয়ারহল এক ধরনের অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন। অ্যারিথমিয়ার লক্ষণ এর ধরনের উপর নির্ভর করে, যেমন খুব জোরালো হৃদস্পন্দন বা খুব ধীর হৃদস্পন্দন।
  • Atherosclerosis (এথেরোস্ক্লেরোসিস): এথেরোস্ক্লেরোসিস শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ পতঙ্গে রক্তের সরবরাহ কমায়। এর লক্ষণ গুলি হল বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট এবং ক্লান্তি, পায়ের পেশীর দুর্বলতা।
  • Congenital Heart Defects (হৃদযন্ত্রের ত্রুটি): এটি হল এক ধরনের হৃৎপিণ্ডঢ়র সমস্যা ভ্রূণের বৃদ্ধি কালে বৃদ্ধি লাভ করে ইহা। কিছু হৃদযন্ত্রের ত্রুটি লক্ষ্য বিহীন হওয়ায় এগুলোকে শনাক্ত করা যায় না, আবার কিছু হৃদ ত্রুটিকে লক্ষণের কারণে শনাক্ত করা যায়।
  • Coronary Artery Disease – CAD (করোনারি আর্টারি ডিজিজ): আর্টারি ডিজিজ এক ধরনের ফলক তৈরি করে যা অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তকে হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুস মধ্য দিয়ে স্থানান্তরিত করতে বাধা সৃষ্টি করে।
  • Cardiomyopathy (কার্ডিওমায়োপ্যাথি): এটি এমন একটি রোগ যার ফলে হৃদপিন্ডের পেশী বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং অনমনীয়, পুরু বা দুর্বল হয়ে যায়।
  • Heart Infections ( হৃদযন্ত্রে সংক্রমন): হার্টের সংক্রমণ মানে, এন্ডোকার্ডাইটিস এবং মায়োকার্ডাইটিস।

হৃদরোগের বিভিন্ন লক্ষণ 

হৃদরোগ আক্রান্তদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এটি চরম পর্যায়ের পৌছলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর এক কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারায়।

জেনে নিন হৃদরোগের বিভিন্ন লক্ষণ সম্পর্কে:

  • বুকে ব্যথা, চাপ, বুক ভারী, হৃদপিন্ডে ঠিক মত রক্ত চলাচল না হলে এমন সমস্যা দেখা দেয়। মেডিকেল তথ্যে, এটি এক ধরনের করোনারি আর্টারি ডিজিজ। নালীতে প্লাক জমার কারণেই এই অসুবিধার সৃষ্টি। এই অসুবিধা গুলি অনুভূত হলে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়।
  • উচ্চ রক্তপাত বা হাইপারটেনশন এর ফলে ধমনীর বিপরীতে রক্তের তীব্রতা বেড়ে যায় এবং কিছু অসস্তিকর অনুভূতি দেখা যায়, এ থেকে জন্ম নেয় হৃদরোগ।
  • অনবরত কফ কাশির এটি হলো এক ধরনের viral flu, যা শ্বাসযন্ত্রের অস্বাভাবিকতার লক্ষণ। হৃদপিণ্ড ফুসফুসে পরিমাণ মত রক্ত সরবরাহ না করলে ফুসফুস শুকিয়ে যায়, এর ফলে বারবার কফের সমস্যা দেখা দেয়।
  • ফুসফুসের রক্ত সরবরাহ কমে গেলে শ্বাসকষ্ট জাতীয় সমস্যা বা বুকে কিছু জমে থাকার অনুভূতি। এই জাতীয় সমস্যা অর্থাৎ ফুসফুসের পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্ত পৌঁছাচ্ছে না।
  • ঘাড়ে ব্যথা সাধারণভাবে একটানা বসে থাকা বা কাজের সময় ঘাড়ে মোচক আসার কারণেই এই ব্যথা হয় বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু এই ব্যথা যদি দীর্ঘদিন ধরে থাকে তা হতে পারে ‘অ্যানজিনা’ নামক হৃদরোগের লক্ষণ।
  • প্রধানত নারীদের ক্ষেত্রে পেট ফাঁপা, বমি বমি ভাব, সাথে বুকে ব্যথা এগুলো হলেই শীঘ্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • পা অসার হয়ে যাওয়া, পা ফোলা, পায়ে ব্যথা এটি এক ধরনের পেরিফেলার ভাসকুলার ডিজিজ এর লক্ষণ। হৃদপিণ্ড যথাযথ ভাবে যথেষ্ট পরিমাণের রক্ত পায়ে সরবরাহ করতে না পারায়, শিরা-উপশিরায় রক্তের পরিবর্তনে বিভিন্ন তরল পদার্থ পায়ের পাতার জায়গা দখল করে এবং পরিবর্তনে পা ফুলে উঠছে।

হৃদরোগের কারণ

হৃদপিন্ডে সঠিকভাবে রক্ত চলাচল না করার কারণেই প্রধানত হৃদরোগের সূত্রপাত হয়। অস্বাস্থ্যকর অনিয়মিত খাদ্য অভ্যেস ও জীবনযাপনের কারণে এই রোগ দেহে বসবাস বাঁধে। এছাড়া জিনগত কারণেও হৃদরোগ জন্ম নিতে পারে। শুধুমাত্র বয়স বাড়লেই যে হৃদরোগের মুখোমুথি হতে হবে- এ কথা সর্বদা সত্য নয়, যেকোনো বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে যে কোন মানুষ।  

heart disease

বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগের ভিন্ন কারণ গুলি জেনে নিন:

  • অ্যারিথমিয়া: সহজাত (জন্মগত) হৃদযন্ত্রের ত্রুটি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বিশেষ কিছু ঔষধের সেবন ধুম্রপান ও মানসিক চাপ।
  • এথেরোস্ক্লেরোসিস: অলস জীবনযাত্রা অস্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া, ওজন বৃদ্ধি , ধূম্রপান এর কারনে রক্তবাহের দেওয়ালে চর্বি জমে যাওয়া
  • হৃদযন্ত্রের ত্রুটি: গর্ভবতী মায়েদের বিশেষ কিছু চিকিৎসা, শারীরিক অবস্থা কিংবা জিনগত কারণে ভ্রূণের  হৃদযন্ত্র বিকাশে ক্ষতি করে।
  • হৃদযন্ত্রে সংক্রমন- রক্ত চলাচলের মাধ্যমে হৃদযন্ত্রে পৌঁছে যাওয়া জীবাণু ভাইরাস পরজীব দ্বারা সৃষ্ট।
  • কার্ডিওমায়োপ্যাথি- এটির কারণ সম্পন্ন ভাবে জ্ঞাত নয় তবে সম্ভাব্য কারণ বিশেষ কিছু ঔষধের সেবন বা জিনগত হতে পারে।

হৃদরোগ শনাক্ত করার পদ্ধতি

বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে হৃদরোগের শনাক্তকরণ করা যায় অনেক সময় কোন রকম লক্ষণ ছাড়াও অনেক মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে পরীক্ষার মাধ্যমে এমন অবস্থাতেও হৃদরোগেকে শনাক্তকরণ করা যায়।

শারীরিক পরীক্ষা করানোর আগে কোনরকম উপসর্গ অনুভব করেছেন কিনা সে নিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করুন। ডাক্তার পরিবার ও ব্যক্তিগত চিকিৎসার ইতিহাস জানতে চাইবেন, জেনেটিক হৃদরোগের ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। আপনার পরিবারে বা ঘনিষ্ঠ কারোর হৃদরোগের কোন সমস্যা থাকলে তা নিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করুন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হৃদরোগ চিহ্নিত করার জন্য কিছু রক্ত পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়, তার মধ্যে অন্যতম হল –

  • Electrocardiogram (EKG) (ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম)
  • Echocardiogram (ইকোকার্ডিওগ্রাম -টুডি ইকো)
  • Stress test(স্ট্রেস  বা চাপ পরীক্ষা)
  • Carotid ultrasound(ক্যারোটিড আল্ট্রাসাউন্ড)
  • Holter monitor(হোল্টার মনিটর)
  • Tilt-table test(টিল্ট-টেবিল পরীক্ষা)
  • CT scan(সিটি স্ক্যান)
  • Heart MRI( হার্ট এমআরআই)
  • Cardiac catheterization(কার্ডিয়াক ক্যাথেটারেশন)
  • Coronary angiography(করো নারী এনজিওগ্রাফি)
  • Electrophysiology(ইলেক্ট্রোফিজিওলজি)

হৃদরোগের চিকিৎসা

হৃদরোগের রোগের চিকিৎসা সাধারণত হৃদরোগের ধরন এবং তা কতটা অগ্রসর হয়েছে তার উপর নির্ভর করে।

মূলত তিনটে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য:

  • অস্বাস্থ্যকর জীবনধারাকে পরিত্যাগ করে এক স্বাস্থ্যকর জীবনধারার পথ অবলম্বন করা। তৈলাক্ত চর্বিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর খাবার  ফল ও সবজি জাতীয় খাবার খাওয়া, প্রতিদিন ব্যায়াম করা, ধূম্রপান ত্যাগ করা এবং মদ্যপানে সেবন কম করা ।হার্টকে সুস্থ রাখতে এই অভ্যাসগুলোকে প্রতিদিনের জীবনে অংশ করে নিন।
  • প্রয়োজনে ডাক্তার পরামর্শিত নির্দিষ্ট ধরনের ওষুধের সেবন করতে হতে পারে, ঔষধ হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডাক্তার কি ধরনের ওষুধ দেবেন তা নির্ভর করছে হৃদরোগের ধরনের উপর। সাধারণভাবে ব্যবহৃত হৃদরোগের ওষুধগুলি হল: beta-blockers, blood thinners, calcium channel blockers, ACE inhibitors.
  • কিছু ক্ষেত্রে সার্জারি বা অস্ত্রপাচার হৃদরোগের লক্ষণ গুলিকে কমাতে অন্যতম প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে। যদি ধমনীতে প্লাক জমার কারণে রক্ত চলাচল প্রায় সম্পূর্ণভাবে বাধা প্রাপ্ত হয় সে ক্ষেত্রে অস্ত প্রচারের মাধ্যমে রক্ত প্রভাবকে স্বাভাবিক করানো হয়।

হৃদরোগকে এড়িয়ে চলতে করণীয়

কিছু কারণকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, যেমন পারিবারিক ইতিহাস। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আছে এমন কিছু কিছু জিনিস এগিয়ে চললে এড়িয়ে চলা যায় হৃদরোগের সম্ভাবনাকেও।

চলুন জেনে নিই সেই উপায়গুলো:

  • আদর্শ কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ মাত্রা  বজায় রাখুন। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টরল এগুলি হার্টের অসুখের অন্যতম কারণ, তাই অবশ্যই এগুলি নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ খেয়াল রাখুন।সাথে সঠিক ওজন বজায় রাখুন।
  • স্বাস্থ্যকর জীবনধারাকে বেছে নিন। স্বাস্থ্যকর খাবার খান, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, ধুম্রপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ করুন। ফার্স্টফুড এবং চিনি জাতীয় খাবারকে এড়িয়ে চলুন। 
  • মানসিক চাপ কে পরিচালনা করুন। টেনশন মুক্ত জীবনযাপন করার চেষ্টা করুন, নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের রিলাক্সেশন টেকনিক গুলি অনুসরণ করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

You cannot copy content of this page