ADHD

ADHD এর কারন , লক্ষণ এবং এর প্রতিকার

শিশু  মানেই সে দুরন্ত হবে চঞ্চল হবে , তবে অতিরিক্ত চঞ্চল হলে সেই সমস্যাকে বলা হয় অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার (ADHD)। এ ডি এইচ ডি একটি নার্ভের রোগ (Neurological Disorder),যা ডাক্তারি ভাষায় নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার নামে পরিচিত। এখন প্রায় অনেক শিশুদের মধ্যে এটি দেখা যায় এবং বড় হওয়ার পরও এটা থেকে যায় অনেক সময়। যেসব শিশুরা ADHD তে ভোগে তাদের কোনো কোনোকিছুতে মনোযোগ করতে সমস্যা হয়, ইম্পালসিভ বিহেভিয়ার কে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না l 

বাড়ন্ত শিশুর মস্তিষ্কে ডোপামিন, নর-এপিনেফ্রিনের মতো কেমিক্যালের মাত্রার তারতম্য ঘটে। যা মস্তিষ্কের তথ্য সঞ্চালন ও তথ্য বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এজন্য ভুক্তভোগী বাচ্চা বুঝতে চায় না কোনটা ভুল, কোন পরিস্থিতিতে কি করা উচিত।

ADHD কেন হয় ?

 এ ডি এইচ ডি-র সমস্যা বিভিন্ন কারনে হতে পারে – 

  1. বংশগত কারণ – বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যে, ৮০ শতাংশ রোগীর এই সমস্যা তাঁদের জেনেটিক কাঠামোর থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
  2. পরিবেশজনিত সমস্যা – যদি কোনও গর্ভবতী মা  সিগারেট বা মদ খান সেক্ষেত্রে তাঁদের শিশুদের এ ডি এইচ ডি সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
  3. মানসিক কারণ – যদি দীর্ঘদিন ধরে শিশুরা কোনও কারণে অযত্নের সম্নুখীন হতে বাধ্য হয় তাহলে তাঁদের মধ্যে এ ডি এইচ ডি-র সমস্যা উৎপন্ন হয়।
  4. ব্যবহারজনিত সমস্যা – কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, শিশুদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও মানসিক যাতনার কারণেও শিশুদের মধ্যে এ ডি এইচ ডি-র সমস্যা উৎপন্ন হয়। 
  5. মাথায় আঘাত – গর্ভাবস্থায় মাথাতে আঘাত হলে  পরবর্তী জীবনে এডিএইচডি ঘটাতে পারে।
  6. জন্মগত খুঁত – বাচ্চারা যারা সময়ের আগে জন্ম নেয় বা খুব কম ওজন নিয়ে জন্মায় তাদেরও ঝুঁকি থাকে।

এ ডি এইচ ডি( ADHD ) রোগের লক্ষন কি ?

এই রোগ সাধারণত ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ভেতর দেখা যায়,তবে  ৩ বছরের ছোট শিশুদের মধ্যেও দেখা গেছে। শিশুকাল থেকে শুরু হয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলেও অনেকসময় রোগলক্ষন থেকে যায়। মেয়েদের থেকে ছেলেদের মধ্যেই ADHD বেশি দেখা যায় এবং তাদের মধ্যে রোগলক্ষনেরও পার্থক্য থাকে; যেমন ছেলেরা অতিরিক্ত চঞ্চল হয়ে থাকে, আবার মেয়েরা অতিরিক্ত অমনোযোগী হয়ে থাকে।

ADHD এর আবার তিনটি প্রকার আছে —

অমনোযোগী – সব বিষয়ে অমনোযোগই প্রধান রোগলক্ষন হিসাবে দেখা যায়।

  • কোনো বিষয়েই  গভীর মনযোগ দিতে পারে না।
  • স্কুলের নানা কাজে ভুল করতে থাকে।
  • অন্য কেউ কথা বললে তা সম্পূর্ণ শুনে উঠতে পারেনা।
  • যেসব কাজে গভীর মনযোগ দরকার তা এড়িয়ে চলে।
  • প্রতিদিনের কাজ করতে ভুলে যায়। 

অতিরিক্ত চঞ্চলতা  – এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজে অতিরিক্ত চঞ্চলতা রোগের লক্ষন হিসাবে দেখা যায়।

  • অকারণে হাত–পা নাড়াতে থাকে , এক জায়গায় শান্ত ভাবে বসতে পারে না l
  • সব সময় কিছু না কিছু  অঙ্গ ভঙ্গি করে যেতে থাকেl 
  • যে কোনো জায়গায় লাফাতে বা দৌড়াতে শুরু করে দেয়l 
  • অতিরিক্ত কথা বলে l 

 অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা – 

  • এরা রুটিন মেনে কাজ করতে পারে না। 
  • নিজেদের একটা কল্পনার জগতে বাস করে। 
  • একই জিনিস নিয়ে খেলতে পছন্দ করে।
  • দৈনন্দিন রুটিনে কোনো পরিবর্তন মেনে নিতে পারেনা। 

কীভাবে বুঝবেন ?

কোনো টেস্ট দ্বারা এ ডি এইচ ডি হয়েছে কি না তা বোঝা যায়না।  তাই পুরো ব্যাপারটাই নির্ভর করে শিশুর আচরনের ওপরে। শিশুর মধ্যে 7/ 8 বছর বয়স পর্যন্ত যদি ইম্পালসিভিটি, অমনোযোগ বা হাইপারঅ্যাক্টিভিটি দেখা যায় তাহলে এ ডি এইচ ডি-র ডায়াগনোসিস করা প্রয়োজন। 

কিভাবে এ ডি এইচ ডি প্রতিরোধ করা সম্ভব ?

শিশুদের মধ্যে ADHD কে নিয়ন্ত্রন করতে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে —

  1. গর্ভবতী অবস্থায় মদ্যপান, ধূমপান বিপজ্জনক সব রকম ওষুধকে বর্জন করতে হবে।
  2. শিশুকে সব বিষাক্ত পদার্থ ও দূষণ থেকে দূরে রাখতে হবে। সিগারেটের ধোঁয়া এবং রঙের বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে শিশুকে রক্ষা করতে হবে।
  3. স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বিশেষ করে জীবনের প্রথম পাঁচ বছরে টিভি দেখা এবং ভিডিও গেম খেলা থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে।
  4. পারিবারিক জীবন যাত্রার পরিবর্তন আনতে হবে। 
  5. শিশুকে যথেষ্ট পরিমানে ভালোবাসা, যত্ন, উৎসাহ ও গুরুত্ব দিতে হবে।
  6. শিশুকে সমস্যায় ফেলে এমন পরিস্থিতি থেকে তাকে দূরে রাখা
  7. রোজের খাওয়া ঘুমের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে হবে ।
  8. সামাজিক অনুষ্ঠানে শিশুকে অন্যদের সাথে মেলামেশায় উৎসাহ দিতে হবে।

অভিভাবক দের কি করতে হবে ?

প্রত্যেক শিশু অনেক আদরের ভালোবাসার ‘যখের ধন’। তাই কোন অবস্থায় মনোবল ভেঙে ফেলা যাবেনা। মা বাবা কে যেকোন সমস্যায় শক্ত থেকে লড়তে হবে এটাই মূল কথা। পজিটিভ পারেন্টিং এখন বহুল চর্চিত বিষয়। প্রয়োজন অভিভাবরা কাউন্সিলিং করতে পারেন । 

শিশুকে পজিটিভ ফিডব্যাক দেয়া খুবই জরুরী। শিশুরা স্কুলে অনেকটা  সময় কাটায়, সেক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে নেয়া দরকার। কারণ স্কুলে যে পড়াশোনা শেখানো হয় তাতে এ ডি এইচ ডি শিশুদের অনেক সময় ফাঁক থেকে যায়।এই বিষয়ে নিজেরা একটু পড়াশোনা করে নিলে বেশ ভালো হয়। সেক্ষেত্রে  শিশুদের কী সমস্যা হতে পারে তা সহজেই বুঝতে পারাযায়। ADHD  আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা থেরাপি, কাউন্সেলিং, বিহেভিয়ার এবং রেমিডিয়াল ট্রেনিং-এর মাধ্যমে করা হয়ে থাকে।এই চিকিৎসা থেরাপিতে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের বিশাল ভূমিকা থাকেl অভিভাবক এবং শিক্ষকরা যদি এই ট্রেনিং নিয়ে বাচ্চাদের “পজিটিভ” চিন্তাধারায় এগিয়ে নিয়ে সমাজের মূল স্রোতে চলার জন্য বিশেষ যত্ন নিয়ে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে থাকেন তাহলে অবশ্যই শিশুরা এই সমস্যা কাটিয়ে উঠবে। 

1 thought on “ADHD এর কারন , লক্ষণ এবং এর প্রতিকার”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

You cannot copy content of this page