Over Weight

ওবেসিটি বা স্থুলতা কী ? ওবেসিটি বা স্থুলতার প্রকারভেদ, কারন এবং ফলাফল কী ? 

আমাদের শরীরে অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে হতে যখন দেহের ওজন স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে  অনেক বেড়ে যায় এবং বি এম আই ৩০ উপর হয়ে যায় তখন তাকে ওবেসিটি বা স্থুলতা বলা হয় । আমাদের নরমাল বি এম আই হল ১৮.৫ থেকে ২৪.৯৯ । কোনও ব্যাক্তির বি এম আই যখন ২৫ থেকে ২৯.৯৯ পর্যন্ত থাকে তখন ওই ব্যাক্তির ওজন বেড়ে গেছে ( Overweight ) বলে ধরা হয় এবং এটি যখন ৩০ এর উপরে যায় তখন তাকে ওবেসিটি বা স্থুলতা ( Obesity )  বলা হয় ।

আজকের এই সময়ে দাঁড়িয়ে ওবেসিটি বা স্থুলতা  কে বিশ্বব্যাপী সমস্যা বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে  আর এই কথা বলার পেছনে নিচের কারন গুলোই যথেষ্ট – 

  • ১৯৭৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ওবেসিটি বা স্থুলতা বিস্বজুড়ে তিনগুন বেড়েছে ।
  • ২০১৬সালে, পুরো বিশ্বে ১.৯ বিলিয়নেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী, অতিরিক্ত ওজনের ছিল। এর মধ্যে ৬৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের ওবেসিটি বা স্থুলতা ছিল ।
  • পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ সেইসব দেশে বাস করেন যেসব দেশে অপুষ্টির শিকারের চেয়ে মানুষ অতিরিক্ত ওজনের কারনে বেশি মারা যান ।
  • ২০২০ সালে ৫ বছরের কম বয়সী ৩৯ মিলিয়ন শিশু অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতা ছিল ।
  • ভারতে ১৩৫ মিলিয়নেরও বেশি ব্যক্তি অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতায় ভুগছেন যার মধ্যে উচ্চ আর্থসামাজিক অবস্থার মানুষের সংখ্যাই বেশি রয়েছে ।

ওবেসিটি বা স্থুলতার প্রকারভেদ

বি এম আই প্রকারভেদ
১৮.৫ থেকে কমকম ওজন
১৮.৫ থেকে ২৪.৫নরমাল ওজন
২৫ থেকে ২৯.৯বেশী ওজন
৩০ থেকে ৩৪.৯ওবেসিটি বা স্থুলতা – ১
৩৫ থেকে ৩৯.৯ওবেসিটি বা স্থুলতা – ২
৪০ এর উপরে ওবেসিটি বা স্থুলতা – ৩

ওবেসিটি বা স্থুলতার কারন কি ?

“ওবেসিটি বা স্থুলতা কী কারনে হয় ?” প্রশ্নটা যত সহজ এর উত্তর তত সহজ নয় । ওবেসিটি বা স্থুলতার প্রধান কারন হল “ পজেটিভ এনার্জি ব্যালান্স “ অর্থাৎ আপনার খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে পাওয়া শক্তি শারীরিক ক্রিয়া প্রক্রিয়া ও কাজকর্মের দ্বারা ব্যায়িত শক্তির পরিমান থেকে অনেক বেশী “

আমরা প্রতিদিনের খাবার থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি পেয়ে থাকি যাকে আপনি এনার্জি ইনপুট বলতে পারেন আবার বিভিন্ন কাজকর্মের মাধ্যমে আমরা নিজের শক্তি খরচ করে থাকি যাকে এনার্জি আউটপুট বলা যায় । আমরা খাবার থেকে যে পরিমানে শক্তি পাই কখনো কখনো সেই পরিমানে শক্তি খরচ করতে পারি না, ফল স্বরুপ সেই শক্তি আমাদের দেহে চর্বি রুপে জমা হয়ে আমাদের ওজন বাড়ায় এবং আমাদেরকে ওবেসিটি বা স্থুলতার দিকে নিয়ে যায় ।

উপরের কারন ছাড়াও আরো অনেক কারন রয়েছে যেগুলোর জন্য কোন ব্যাক্তি ওবেসিটি বা স্থুলতার শিকার হতে পারেন –

বংশগত কারন 

কিছু কিছু ক্ষেত্রে বংশগত দিক দিয়েই ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবনতা দেখা যায়, অর্থাৎ কোন ব্যাক্তি রোগা হবে কিনা মোটা হবে তাও অনেক সময় উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া জীনের উপর নির্ভর করে । জন্মদাই মায়ের যদি বেশী ওজন অথবা ওবেসিটি থাকে তবে সে ক্ষেত্রে বচ্চারও ওবেসিটি হওয়ার ৭৫% সম্ভাবনা রয়েছে ।

Over Eating

খাদ্যভ্যাস

কিছু মানুষ অভ্যাসগত কারনেই বেশী খাবার খান যার ফলাফল ওবেসিটি ,খাবার খাওয়ায়ার কোনও নিয়ম কানুন ই মানতে চান না এই ধাঁচের মানুষেরা অর্থাৎ যখনি সুযোগ পাওয়া যায় তখনি পেট পুরে খাওয়ার স্বভাব রয়েছে এদের । সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতেও এঁরা প্রায় সময় বেশী খাবার খেতে মানা করেন না যার ফলে ওজন বেড়ে যায় ।

শারীরিক পরিশ্রম 

দেখা গেছে যে বেশী পরিশ্রমী মানুষের তুলনায় কম পরিশ্রমী মানুষেরাই ওবেসিটি এর শিকার হন । যারা প্রতিদিন খাবার খাওয়ার পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম করেন তারা তুলনামুলক ভাবে সুস্থ এবং নিরাপদ জীবনযাপন করেন ।

মানসিক কারন

ডিপ্রেশন, একাকীত্ব, মনখারাপের সময়ও অনেকে বেশী খাবার খেতে পছন্দ করেন । যখন আর কনকিছুই করার থাকে না তখন খাওয়াদাওয়া করেই সময় কাটান যার ফলে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা হয়ে ব্যাক্তি  ওবেসিটি এর শিকার হন ।

হরমোনের ভারস্যামহীনতা

যাদের হরমোনের ভারসাম্য ঠিক নয় তাদের খেত্রেও ওবেসিটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । এর মধ্যে হাইপোথাইরয়েডিজম অন্যতম । এমন অনেক আছেন যারা অনেক চেষ্টা করা সত্ত্যেও ওজন কমাতে পারেন না তাদের হরমোন এর ভারসাম্য ঠিক রয়েছে কিনা তা চেক করে নেওয়া প্রয়োজন ।

ওবেসিটি বা স্থুলতার ফলাফল কী হতে পারে ?

ওবেসিটি বা স্থুলতার কারনে আপনার জিবনের বিভিন্ন দিক অস্বাস্থকর হয়ে উঠতে পার এবং আপনি বিভিন্ন স্বাস্থ সক্রান্ত সমস্যায় পরতে পারেন –

  • মৃত্যুর ঝুকি বাড়ায় – ওবেসিটি বা স্থুলতা যে কন রকমের মৃত্যুর ঝুকি বাড়িয়ে দেয় । ওবেসিটি বা স্থুলতা আছে এমন ব্যাক্তিরা ভিভিন্ন রোগে যেমন হাই ব্লাড প্রেসার, হাইপারলিপেডেমিয়া, ডায়াবেটিস, গাউট, ইত্যাদি কারনে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।
  • হৃদরোগ –  ওবেসিটি বা স্থুলতা যাদের রয়েছে তারা খুব সহজেই হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন । রক্তে কলেস্টেরলের পরিমান বেড়ে যেতে পারে ফলে হাই ব্লাড প্রেসার , হার্ট এটাক এর মতো সমস্যা হতে পারে ।  স্বাস্থ্যকর ওজন মেইন্টেইন করে চললে বিভিন্ন হৃদরোগের ঝুকি যেমন হাই ব্লাড প্রেসার, হার্ট এটাক , রক্তে কোলেস্টেরল জমা হওয়ার মতো সমস্যায় কম পরতে হয় ।
Erectile Disfuntion in bengali min
  • ডায়াবেটিস – ওবেসিটি বা স্থুলতা আছে এমন ব্যাক্তিদের ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে এবং এটি ভারতকে ডায়াবেটিসের রাজধানী করে তুলতে অনেকাংশে সাহায্য করছে । কারন ভারতে যেমন অনেকেই অপুষ্টির শিকার তেমনি অত্যধিক পুষ্টির শিকার ও হচ্ছেন অনেকেই তাছাড়া ভারতীরা  পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় কম বি এম আই তেও ডায়াবেটিসের জন্য বেশী সংবেদনশীল ।
  • গল ব্লাডার স্টোন – ওবেসিটি বা স্থুলতা আছে এমন ব্যাক্তিদের  গল ব্লাডার স্টোন হবার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে ।
  • ক্যান্সার –  ওবেসিটি বা স্থুলতা  কলন ক্যন্সার , পিত্তথলিতে ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার, মলদারে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় তাছাড়া এটি মহলাদের ব্রেস্ট ক্যনাসার, ডিম্বাসয়ের ক্যন্সারেরে সম্ভাবনাও বাড়ায় ।
  • বন্ধ্যাত্ব – ওবেসিটি বা স্থুলতা আছে এমন মহিলারা মাসিকের ভিভিন্ন সমস্যায় ভুগেন এবং যার ফলস্বরুপ বন্ধ্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
  • ঘুমের সমস্যা – ওবেসিটি বা স্থুলতা যাদের রয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই ঘুমের সমস্যাতে অর্থাৎ নিদ্রাহীনতায়  ভুগেন ।
  • মানসিক সমস্যা – ওবেসিটি বা স্থুলতার কারনে অনেকেই হীনমন্যতায় ভুগেন যা একটি মানসিক সমস্যা ।
  • তাছাড়া যাদের ওবেসিটি বা স্থুলতা রয়েছে তাদের গাউট , অস্টিওপরসিস , পিঠে ব্যাথার মতো সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় ।

1 thought on “ওবেসিটি বা স্থুলতা কী ? ওবেসিটি বা স্থুলতার প্রকারভেদ, কারন এবং ফলাফল কী ? ”

  1. অতিরিক্ত ওজন আমাদের শরীরের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর এবং বিপদজনক। বিভিন্ন কারনে আমাদের শরীরের অজন বেড়ে যেতে পারে। আমাদের শরীরে ওজন বেড়ে যাওয়ার জন্য নানা ধরনের রোগ জন্ম নিতে পারে। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। অবশ্যই আমাদের শরীরের ওজনের ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

You cannot copy content of this page