রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে এবং তা জয়েন্টে জমা হয়ে প্রদাহ সৃষ্ট হলে গেঁটে বাত হয়।গাউট বা গেঁটে বাত এমন একধরনের রোগ, যার উদ্ভব হয় মেটাবলিজমের বিশৃঙ্খলা থেকে।এই ব্যথা হঠাৎ তীব্র অসহনীয় রকমের হয়ে থাকলেও সাধারণত পাঁচ-সাত দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়।
ইউরিক অ্যাসিড একধরনের টক্সিন যা আসলে প্রাকৃতিক বর্জ্য; এবং যদি এই বর্জ্য দেহে জমা হতে থাকে, তবে তা সাংঘাতিক পরিমান ব্যাথার সৃষ্টি করে।ইউরিক অ্যাসিড যখন দেহে জমা হয় তখন তা কেলাস বা ক্রিস্টাল আকারে সঞ্চিত হয়, যা কিনা প্রচণ্ড ব্যাথার কারণ হয়। যদি দেহ ইউরিক অ্যাসিডের ক্রিস্টালগুলি কে দেহ থেকে বের করে দিতে সক্ষম না হয় তবে তা জমা হতে থাকে এবং হাত-পা ও জয়েণ্টে ফোলাভাব সৃষ্টি করে। মূলত, ইউরিক অ্যাসিডের ক্রিস্টালগুলি, শরীরের জয়েন্টের যেখানে লুব্রিকেটিং ফ্লুইড থাকে, সে জায়গাগুলিকে আটকে দেয়। যখন ঐ লুব্রিকেটিং ফ্লুইডগুলি চলাচলের জায়গা না পেয়ে আটকে পরে, অংগ-প্রত্যঙ্গগুলি তখন অনমনীয় হয়ে পরে ও ফুলে ওঠে।
রোগের প্রাদুর্ভাব
বাত সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে সাধারণত এটি রজঃনিবৃত্তির পর অর্থাৎ ৪৫ বছরের পর দেখা দেয়। শিশু এবং তরুণদের সাধারণত এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায় না।
কেন হয় এই গেঁটে বাত ?
স্বাধারণত আমরা যে প্রোটিন খাই তা থেকে রক্তে খুব বেশি ইউরিক এসিড জমে না। এক ধরণের এনজাইম এই এসিড-এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু বেশি পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করতে থাকলে একটি পর্যায়ে রক্তে ইউরিক এসিড জমতে শুরু করে এবং তা অস্থি-সন্ধিতে এক ধরণের কৃস্টাল আকারে থেকে যায়। ফলে সেই স্থানটি ফুলে ওঠে, গরম হয় ও ব্যথার উদ্রেক করে। একিউট গাউট যদিও ধরা পড়ে রাতারাতি, তবে এর প্রক্রিয়াটি শুরু হয় দীর্ঘ দিনের খাদ্যাভ্যাস অথবা জীনগত কারণে। আবার ডায়েটিং এর ফলে ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে বা দীর্ঘদিন উপোস থাকার কারণে শরীরের রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে ইউরিক এসিড যখন প্রস্রাবের সাথে ঠিকমতো বেরিয়ে যেতে না পারলে গেঁটে বাত হতে পারে।

গাউট বা গেঁটে বাত থেকে বাঁচতে কি খাবেন ?
• রুটি বা পরিমিত ভাত।
• দুধ (ননীমুক্ত)।
• ফল (বিশেষত: চেরি)।
• পেঁপে (কাঁচা পেঁপে অর্ধ – সেদ্ধকরে)।
• সবজি।
• মিঠা পানির মাছ।
• পুদিনা পাতার রস।
• তেঁতুলের শরবত এবং প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধপানি।
গাউট বা গেঁটে বাত থেকে বাঁচতে কি খাবেন না?
• মাংস, হৃৎপিন্ড, কলিজা।
• ব্রয়লার মুরগি ও হাঁসের মাংস।
•সামুদ্রিক মাছ (ইলিশসহ) ও চিংড়ি।
• মাশরুম।
• এলকোহল।
• ডুবো তেলে ভাজা খাবার।
• ডিমের কুসুম।
• ডাল (বিশেষত, মসুর)।
• ছোলা।
• মাখন।
• মিষ্টি জাতীয় খাবার ও চানাচুর।
• কোমল পানীয় ও আইসক্রিম।
• সবুজ শাক (বিশেষত: পালংশাক ও পুঁইশাক)
গাউট বা গেঁটে বাত এর প্রতিরোধ
প্রতিরোধই বাতের সমস্যা থেকে উপশমের উত্তম উপায়। রোগ দেখা দিলে ওষুধের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়া যায় বটে, তবে তখন অ্যালকোহল এবং যেসব খাবার গ্রহণ করলে ইউরিক এসিড মজুদ হওয়া বেড়ে যায়, সেসব থেকে দূরে থাকা অবশ্য কর্তব্য। এছাড়া রোগীকে প্রচুর পানি খেতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, সুষম খাবার ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ওজন ঠিক রাখতে হবে।
গাউট বা গেঁটে বাত এর ব্যথা কমানোর উপায়
১) বাতের ব্যথা বাড়ার একটি প্রধাণ কারণ শরীরে ভিটামিন ডি ও ক্যালশিয়ামের ঘা়টতি। ফলে নিয়মিত এই দুটি উপাদান বেশি পরিমাণে নিলে বাত আগেই আটকানো যেতে পারে।
২) ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ওজন কম থাকলে হাড়ের ওপর চাপ বেশি পড়বে না, ফলে বাত থাকলেও ব্যথা প্রতিরোধ করা যাবে অনেকটাই।
৩) নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। এর ফলে হাড়ের জয়েন্ট সক্রিয় থাকবে, তাই ব্যথা রাখা যাবে নিয়ন্ত্রণে।
৪) ফিজিওথেরাপি করতে হবে নিয়ম করে। ফিজিওথেরাপি করলে দেহে রক্ত চলাচল বাড়াবে যা হাঁটুতে প্রদাহের ফলে বাধাপ্রাপ্ত হয় মাঝেমাঝে। এর ফলে হাড়ের জয়েন্টের সচলতাও বাড়বে।
৫) সাঁতার ব্যথা কমানোর ভীষণ ভাল দাওয়াই। নিয়মিত সাঁতার কাটলে পেশিতে চাপ কমে যায়, দেহে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
আমরা কত দিন বাঁচব, তার উপর আমাদের কোন হাত নেই। তবে সুস্থ থাকাটা অনেকাংশে আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবন-যাপন পদ্ধতির উপর নির্ভর করে। কাজেই সচেতন হন, যে কটা দিন বাঁচবেন, জীবনকে উপভোগ করে বাঁচুন।