Copy of Copy of Copy of Copy of Add a little bit of body text 1 min

শিশুকে কীভাবে বুকের দুধ খাওয়াবেন – জানুন সঠিক পদ্ধতি

প্রতি নবজাতকের প্রথম ছয় মাসের জন্য শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো হয় কারণ বুকের দুধ শিশুর সর্বোত্তম পুষ্টি প্রদান করে। এছাড়া, বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ক্ষরিত হওয়া হরমোনগুলি মায়ের প্রসব পরবর্তী আরোগ্যকে ত্বরাণ্বিত করে। তবে বিভিন্ন কারণে অনেক মায়েদের তাদের নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানো কঠিন বলে মনে হয়, এই কারণগুলির মধ্যে রয়েছে কয়েকজন মা বুকের দুধ খাওয়ানোর সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না। বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় উদ্ভূত অন্যান্য সাধারণ উদ্বেগগুলি মোকাবেলা করার জন্য সঠিকভাবে খাওয়ানোর উপায়টি জানা গুরুত্বপূর্ণ।

আবার  অনেক সময়ই শিশু জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ পায় না। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করাই এর মূল কারণ। বিশেষ করে নতুন মায়েদের এই সমস্যা বেশি হয়। একারণে নবজাতকের কোলে নেয়ার (position) এবং বুকে দেয়ার পদ্ধতি(Attachment) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় বাচ্চাকে কিভাবে কোলে নিবেন ?

বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুকে সঠিকভাবে কোলে নিতে হয়। অন্যথায় শিশুর মধ্যে পড়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে বা অন্য কারণে অস্বস্তিতে ভোগে এবং নিশ্চিন্তে দুধ খেতে পারে না।

১। শিশুর মাথা মায়ের কনুইএর ভাজে থাকে।

২। শিশুর পাছা মায়ের হাতের তালুতে থাকে।

৩। শিশুর মাথা, পিঠ ও পাছা একই লাইনে থাকে এবং শিশুর শরীর মায়ের শরীরের সাথে লাগানো থাকে।

৪। মা শিশুর পুরো শরীরকে ধরে থাকে।

৫। দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর মুখ মায়ের স্তনের কাছে থাকে।

৬। শিশুর নাক মায়ের স্তনের বোটার ঠিক বিপরীতেই থাকে। যেন সহজেই শিশু মুখে নিয়ে নিতে পারে।

কিভাবে বাচ্চাকে মায়ের বুকে দিবেন ?

কোলে নেয়ার পর গুরুত্বপুর্ণ হলো শিশুকে কিভাবে বুকে দেয়া হচ্ছে সেটা। সঠিক নিয়ম বুকে দিলে শিশু সহজে ও পর্যাপ্ত পরিমানে বুকের দুধ পায়।

১। শিশুর থুতনি মায়ের স্তনে লাগানো থাকবে।

২। শিশুর মুখ বড় করে হা করে থাকবে।

৩। শিশুর নিচের ঠোঁট বাইরের দিকে উল্টানো থাকবে।

৪। স্তনের উপরের কালো অংশ নিচের অংশের চেয়ে বেশি দেখা যাবে।

কিভাবে বুঝবেন শিশু বুকের দুধ পাচ্ছে কিনা

শিশু বুকের দুধ পেলে সাধারনত শান্তভাবে খেতে থাকে। অনেক সময় হাত-পা নেড়ে খেলাধুলাও শুরু করে দেয়। অনেক সময় শিশুর ঢোক গেলার শব্দও মা শুনতে পান। এছাড়া লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে শিশুর গাল ফোলা আছে অর্থাৎ ডেবে যাচ্ছে না। অন্যদিকে, শিশু বুকের দুধ না পেলে অস্থির হয়ে যায়। জোড়ে জোড়ে টেনে দুধ খাওয়ার চেষ্টা করে। ফলে, গালদুটো ভিতরের দিকে দেবে যায়।

কতক্ষণ দুধ খাওয়াবেন

নবজাতক যখনই দুধ খেতে চাইবে তখনই দিতে হবে। প্রথম ২ থেকে ৩ দিন কষ-কষ দুধ আসে, একে শালদুধ বলে, খুবই পুষ্টিসম্পন্ন এই শালদুধ। তারপর বাচ্চা যত চুষবে ততই দুধ নামবে। দুধ খাওয়ানোর পর পেটের বাতাস বের করতে হবে। কাঁধে নিয়ে করা যেতে পারে বা কনুইয়ের মধ্যে ওর দেহ নিয়ে কোলের মধ্যে বসিয়ে করানো যায়। নবজাতক যদি দিনে-রাতে ছয়বার প্রস্রাব করে তাহলে বুঝতে হবে যে ও যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে। পুরোপুরি ছয় মাস শুধু বুকের দুধ দিয়ে বাচ্চা পালনের মনোবৃত্তি মা কে তৈরী করতে হবে।

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর বিভিন্ন অবস্থান

ক্রস ক্র্যাডল হোল্ড-

  • হাতল ওয়ালা একটি চেয়ারে সোজা হয়ে বসুন।
  • আপনার পেট দিয়ে শিশুকে ধরুন যাতে সে আপনার শরীরের সংস্পর্শে থাকে।
  • মাথার পেছনে অবলম্বন দেওয়ার জন্য হাতের তালু ব্যবহার করে, আপনি শিশুকে যে স্তন থেকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তার বিপরীতে বাহুটির মাথার নীচে দিন।

ক্র্যাডল হোল্ড

  • সোজা হয়ে বসুন এবং আপনার দিকে শিশুর মুখ এবং শরীর ফিরিয়ে রেখে তাকে আপনার কোলে পাশ ফিরিয়ে শোওয়ান।
  • আপনার হাত দিয়ে আপনার শিশুর মাথা, পিঠ এবং নীচের দিক ধরার চেষ্টা করুন।
  • বিপরীত হাত দিয়ে আপনার স্তনটি ধরে রাখুন এবং আস্তে আস্তে চাপুন যাতে স্তনবৃন্ত শিশুর মুখে থাকে ।

সাইড লাইং

  • আপনি পাশ ফিরে শোন এবং আপনার বাচ্চাকে আপনার পাশে পাশ ফিরিয়ে শোয়ান যাতে আপনি এবং শিশু একে অপরের মুখোমুখি হন।
  • আপনার স্তনের নীচের দিকে আপনার শিশুর মাথাটি রাখুন যাতে তার মাথাটি আপনার স্তনবৃন্তের সাথে এক লাইনে থাকে।
  • প্রয়োজন হলে, আপনার শিশুর মাথাটিকে অবলম্বন দেওয়ার জন্য আপনার হাতের নীচের দিকটি ব্যবহার করুন এবং খালি হাতটি দিয়ে আপনার স্তনকে চাপ দিন।

মায়ের দুধের উপাদানের তারতম্য

মায়ের বুকের দুধ তিন রকমের হতে পারে – শালদুধ (colostrum), প্রাথমিক দুধ (foremilk), শেষের দিকের দুধ (hindmilk)।

শালদুধ শিশুর জন্মের প্রথম কয়েক দিন আসে। এরপর স্বাভাবিক যে দুধটা আসে সেটাই দুই রকম হয় প্রারম্ভিক দুধ ও শেষের দুধ।

প্রথম দিকের বা প্রারম্ভিক দুধ (Foremilk): এই দুধ শেষের দুধের চাইতে পাতলা, এটা বেশি পরিমানে তৈরি হয়। এতে প্রচুর আমিষ, শর্করা এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে।

শেষের দুধ (Hindmilk): শেষের দুধ দেখতে সাদা হয় কারণ এতে অনেক চর্বি থাকে। এই চর্বি মায়ের দুধের বেশির ভাগ শক্তি সরবরাহ করে।

এই জন্যই শিশুকে একটি স্তনের সম্পূর্ণ দুধ খাওয়ানো শেষ করে পরের স্তনের দুধ খাওয়াতে হবে। যদি শিশুকে এক স্তনের দুধ সম্পূর্ণ না খাওয়ানো না হয় তাহলে পূর্ণ পুষ্টি পাবে না এবং শিশুর ওজন বৃদ্ধি হবে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

You cannot copy content of this page