হাইপোগ্লাইসেমিয়া এর লক্ষণ, কারন এবং চিকিৎসা

রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা কমে যাওয়া কে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলা হয়। এটি কেনো রোগ নয়। কিন্তু এর ফলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি সাধারণত যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে অথবা খাবার, ওষুধের বা ব্যায়াম করার সমস্যা রয়েছে তাদের মধ্যে বেশি হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যাদের ডায়াবেটিস বা এরকম ধরনের সমস্যা নেই তাদেরও রক্তর গ্লুকোজ মাত্রা কমে যেতে পারে।

আমাদের শরীরের সমস্ত কোষ গুলি সথিকভাবে কাজ করার জন্য এনার্জির প্রয়োজন, আর গ্লুকোজ সমস্ত কোষে এনার্জি প্রদান করে থাকে,আর হরমোন ইনসুলিন সেই কোষ গুলি কে এনার্জি ব্যবহার করতে সাহায্য করে থাকে । তাই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে গেলে মানুষ কোমা তে চলে যেতে পারে অথবা মৃত্যুর সম্মুখীন ও হতে পারে।

সমীক্ষা তে দেখা গেছে আমাদের দেহে সাধারণত গ্লুকোজের মাত্রা ৭০ মিলিগ্রাম প্রত্যেক ডেসিলিটার এর থেকে নিচে নেমে গেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া দেখা দেয়।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষন 

যাদের অল্প মাত্রায় হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয় তাদের মধ্যে সাধারণ উপসর্গ যা লক্ষ্য করা যায় তা হলো-

  • খিদে বেড়ে যাওয়া।
  • ক্লান্তি অনুভব করা।
  • শরীরে কাঁপুনি হওয়া।
  • বেশি মাত্রায় ঘাম হওয়া।
  • হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া বা অগতিশীল হয়ে যাওয়া।
  • শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া।

গুরুতর হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে যে উপসর্গ গুলো লক্ষ্য করা যায় তা হলো-

  • বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়া।
  • খিচুনি লাগে শরীরে নানা অঙ্গে।
  • বার বার দুঃস্বপ্ন আসা।
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
  • কোমা তে চলে যাওয়া।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ফলাফল 

উপরের উপসর্গ গুলি দেখা দেওয়ার পরে যদি একজন ব্যাক্তি পদক্ষেপ না নেয় তাহলে ব্যক্তির –

  • খেতে বা পান করতে অসুবিধা শুরু হবে।
  • শরীরে খিচুনি বেড়ে যাবে।
  • মানসিক চেতনার ক্ষতি হতে থাকবে।
  • আর অবশেষে কোমা তে চলে যেতে পারে। 
  • এর দ্রুত চিকিৎসা না হলে মৃত্যু ও হতে পারে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণ 

  • ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করলে বা কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার না খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যেতে পারে।
  • শারীরিক কার্যকলাপের বৃদ্ধি কিছু সময়ের জন্য রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস এর সমস্যা রয়ছে তাদের ক্ষেত্রে।
  • বিভিন্ন ওষুধ অনেক সময় হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে। কোনো মানুষ ডায়াবিটিস ছাড়া ডায়াবেটিসের ওষুধ খেলে এর সম্ভবনা বেড়ে যায়।
  • নিয়মিত মদ্য পান করলে অনেক সময় লিভার কাজ করা বন্ধ করে দেয় যার ফলে রক্তে পরিমাণ মতো গ্লুকোজে পৌঁছায় না, ফলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।
  • এ ছাড়াও লিভার এর সমস্যা, কিডনির সমস্যা বা অন্য কোনো শারীরিক ব্যাধি থাকলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া এর কারণ হয়ে উঠতে পারে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার চিকিৎসা 

রক্তে  গ্লুকোজ এর মাত্রা কমে যাওয়ার কোন লক্ষণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ একজন বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ নিয়ে রক্তে গ্লকুজের মাত্রা টেস্ট করে নেওয়া প্রয়োজন ।  রক্তে  গ্লুকোজ এর মাত্রা কমে গেলে রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে   ১৫-২০ গ্রাম চিনি ,ভাত, বাজার থেকে কিনে আনা গ্লকুজ , ফলের রস খাওয়ানো যেতে পারে তাছাড়া উচ্চমাত্রায় কার্বোহাইড্রেট আছে এমন খাবার ( হাই গ্লাইসেমিক ইন্ডিক্স যুক্ত খাবার  ) খাওয়ানো যেতে পারে যাতে ব্যক্তির সুগার লেভেল তাড়াতাড়ি নরমাল হয়ে যায় । এই মতো অবস্থায় এটাও খেয়াল রাখতে হবে যাতে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ানোর কারনে আবার সুগারের মাত্রা বেড়ে না যায় , তার জন্য এরকম পরিস্থিতিতে রোগীকে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞয়ের তত্ত্বাবধানে রাখা উচিত ।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You cannot copy content of this page