ডিপ্রেশন কেন হয়

ডিপ্রেশন কী ? ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় কী ?

বর্তমান প্রতিযোগিতার দিনে সবচেয়ে মারাত্বক ও কমন একটি রোগের নাম ডিপ্রেশন। এটি এমন একটি রোগ যা যৌবনকাল থেকে বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত যেকোনও বয়সে হতে পারে। প্রায় সবদেশে এই রোগের ভয়াবহ প্রভাব দেখা যাচ্ছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিপ্রশনের শিকার ভারতের মানুষ, সংখ্যায় প্রায় 30 কোটি। আমেরিকাতে একটি সমীক্ষায় জানা গেছে 2015-16 সালে ওখানের প্রায় 1.60 কোটি মানুষ ডিপ্রেশনের শিকার হয়েছেন। 

ডিপ্রেশন কী ?

মানুষের মানসিক অবসাদ যখন তার দৈনিক রুটিন, চিন্তাভাবনা, কাজকর্মে প্রভাব ফেলতে শুরু করে তাকেই ডিপ্রেশন বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি করে যে আপনার কোনও কাজ করার ইচ্ছাশক্তি নষ্ট হয়ে যায় এবং আপনি দীর্ঘদিন মানসিক অবসাদে ডুবে থাকতে শুরু করেন ও চরম একাকীত্ব বোধ আপনাকে গ্রাস করে। 

ডিপ্রশনের কারন

আমাদের জীবনে রোজ কোনও না কোনও ঘটনা ঘটতে থাকে, কিন্তু কিছু ঘটনা আমাদের জীবনে বিশাল প্রভাব বিস্তার করে। ডিপ্রেশনের জন্য এরকম কিছু ঘটনাই দায়ী। হঠাৎ করে যদি কারোর অত্যন্ত প্রিয়জন মারা যায় বা কোনও ব্যাক্তি যদি কর্মহীন হয়ে পড়ে তাহলে তার ডিপ্রশনের শিকার হওয়ার প্রবনতা বেড়ে যায়। এছাড়াও আমাদের পরিবেশ, জীবনপ্রনালী, মানসিক স্থিতীও ডিপ্রশনের কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে। 

ডিপ্রেশনের লক্ষন

  • ডিপ্রেশনের শিকার ব্যাক্তির মধ্যে সবসময় একটা একাকীত্ব ভাব কাজ করে, এরা সবসময় অবসাদে ভোগেন, এদের কাজ করার ইচ্ছাশক্তি নষ্ট হয়, এবং উদাসীন ভাব দেখা যায়।
  • এই ধরনের ব্যাক্তিদের মধ্যে নিদ্রাহীনতা (Insomnia) বা অতিনিদ্রা (Hypersomnia) দুই লক্ষ্য করা যায়।
  • এই ধরনের ব্যাক্তিরা নিজেদের সমাজ থেকে আলাদা করে নেন, এদের মধ্যে অল্পেতেই কেঁদে ফেলার প্রবনতা দেখা যায় এবং সবসময় এক নিরাশার ভাব কাজ করে।
  • ডিপ্রেশনের প্রভাবে হঠাৎ করে ওজন বৃদ্ধি বা দ্রুতহারে ওজন ক্ষয় উভয়ই হতে পারে।
  • ডিপ্রেশনের শিকার ব্যাক্তিদের সবসময় এক আত্মগ্লানি কাজ করে, যার ফলে এদের আত্মহত্যা করার প্রবনতা দেখা যায়।
  • এরা খুবই অমনোযোগী হয়, এবং  সবসময় এক ক্লান্তি ভাব এদের মধ্যে কাজ করে।
Health consultation

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

ডিপ্রেশন বিভিন্ন পর্যায় অনুসারে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন থেরাপির সাহায্য নেন কারন ডিপ্রেশনের কোনও চিকিৎসা এখনো আবিস্কার হয়নি। সেইরকম কয়েকটি থেরাপি হল :-

  •  COGNITIVE BEHAVIOURAL THERAPY :- এই থেরাপিতে রোগির অতীত কালের জীবন সম্পর্কে জেনে নেওয়া হয়। এই ঘটনা রোগির জীবনে কিরকম প্রভাব ফেলেছে তার গুরুত্ব বুঝে সমস্যার সমাধান করা হয়। Computerised cognitive behavioural therapy তে মৌখিক কাউন্সেলিং এর বদলে কম্পিউটার এর সাহায্য কাউন্সিলিং করা হয়।
  • INTERPERSONAL THERAPY :- এই ধরনের কাউন্সেলিং-এ রোগীর ব্যাক্তিগত জীবন ও সম্পর্কের সম্বন্ধে জেনে কাউন্সেলিং করা হয়। ব্যাক্তিগত জীবনের প্রভাবে যদি রোগী ডিপ্রেশড্ থাকেন তাহলে এই কাউন্সেলিং তার সহায়ক হবে।
  • PSYCHODYNAMIC PSYCHOTHERAPY :- এই কাউন্সেলিং-এ রোগীর সাথে কথাবর্তার মাধ্যমে তার মানসিক অবস্থা বুঝে, তার চিন্তাভাবনা, মনের ভাব বুঝে তার সমস্যার সমাধান করা হয়।
  • ANTIDEPRESSANTS :-  ডিপ্রশন চরম পর্যায়ে পৌঁছালে Antidepressants ব্যাবহার করা হয় । ডিপ্রেশনের কারন অনুসন্ধান করে তবেই বিশেষজ্ঞরা এটি ব্যাবহার করার উপদেশ দেন।

ডিপ্রেশনকে প্রতিহত করবেন কীভাবে ?

ডিপ্রেশনের বিভিন্ন থেরাপি সম্বন্ধে তো জানলেন। কিন্তু কিছু বিষয় প্রথম থেকেই কিছু বিষয় অবলম্বন করলে ডিপ্রশনকে সহজেই প্রতিহত করা যায়। আসুন দেখেনি সেই বিষয় গুলি :- 

  • দৈনিক 7-8 ঘন্টা করে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
  • অবসর সময়ে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে সময় কাটান।
  • সময় পেলেই ছোটখাটো কোনও ট্যুর করে ফেলুন।
  • না বলতে শিখুন, কোনও কিছুতে মন সায় না দিলে জোর করে হ্যাঁ বলবেন না।
  • সকালে মর্নিং ওয়াক করার অভ্যাস করুন, সুস্থ শরীর সুস্থ মনের চাবিকাঠি ।
  • মদ্যপান ও ধুমপান থেকে বিরত থাকুন, এতে সাময়িক স্বস্তি এলেও পরে বড় ধরনেক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন। 

সবশেষে বলব নিজের গুরুত্ব বুঝুন। প্রত্যেকের জীবনেই খারাপ সময় আসে কিন্তু সেই সময় ধৈর্য্য ধরতে হয়। নিজের ওপর ভরসা রাখলে আমরা খুব সহজেই এই কঠিন সময় কাটিয়ে উঠতে পারি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

You cannot copy content of this page

Scroll to Top