Liver Cirrhosis

লিভার সিরোসিস এর কারন, লক্ষণ এবং চিকিৎসা

লিভার সিরোসিস ( লিভারের বাংলা নাম যকৃৎ ) লিভারে অসুখের সর্বশেষ স্টেজ ,দীর্ঘদিন হেপাটাইটিসে ভুগলে তা পরবর্তী কালে লিভার সিরসিসে পরিনত হতে পারে। এতে লিভারের কোষগুলো ফুলে ( ফাইব্রোসিস ) যায়, এবং লিভারের কোষগুলো নষ্ট হতে থাকে এবং দাগ সৃষ্টি হয়। সিরোসিসের কারণে যে দাগ সৃষ্টি হয় তা সাধারণভাবে অপরিবর্তনীয়, কিন্তু চিকিৎসার দ্বারা এই রোগের উপশম সম্ভব। 

National Institute Of Health এর সমীক্ষা অনুযায়ী প্রত্যেক ৪০০ ব্যক্তির মধ্যে ১ জন করে মানুষ লিভার সিরোসিসের শিকার হয়, এবং এই রোগ মহিলাদের দের থকে পুরুষদের বেশি হয়ে থাকে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগ  খুব খারাপ অবস্থায় না পৌঁছালে এর লক্ষণ গুলি বোঝা যায় না। যখন লিভারের দাগ এমন পর্যায় পৌঁছায় যখন লিভারের কাজ করবার ক্ষমতা সীমিত হয়ে আসে তখন এর লক্ষণ গুলি দেখ যায়।

লিভার সিরোসিস এর কারন 

লিভার সিরোসিস হওয়ার জন্য বিভিন্ন কারন থাকে ,এর মধ্যে বেশী মদ্যপান এবং হেপাটাইটিস সংক্রমণ কে প্রধান কারন মনে করা হয় ।

অতিরিক্ত মদ্যপান 

মদ্যপান করার পর লিভার মদ কে ভেঙ্গে সরলীকৃত করে দেয় , কিন্তু  বেশী মদ্যপান করলে  অত্যধিক মদের ( অ্যালকোহল ) পরিমান বেড়ে যায় এবং লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হয় । এটি বিশেষ করে যারা ১০ বছর থেকে  খুব বেশী মদ্যপান  করে তাদের মধ্যেই বেশী দেখা যায়, এবং গবেষনা অনুযায়ী প্রতি ১০ জনে ১ জনের লিভার সিরোসিস হবার আশঙ্কা রয়েছে ।

হেপাটাইটিস 

দীর্ঘদিন ধরে হেপাটাইটিস সি এর সঙ্ক্রমণ লিভারে দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহের সৃষ্টি করে , যা পরবর্তী কালে লিভার সিরোসিস এর রুপ নেয় । গবেষনায় দেখা গেছে যে দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জনের লিভার সিরোসিস হয় তবে এটি সাধারণত প্রাথমিক সংক্রমণ থেকে প্রায় ২০ বছর বা তারও বেশি সময় নেয়।

ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী সংক্রমণ

কখনো কখনো ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী সংক্রমণের জন্যও লিভার সিরোসিস হয় , যেগুলো সাধারনত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে দেখা যায় ।

অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতা 

অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতার কারনেও লিভার সিরোসিস হওয়ার সম্ভবনা থাকে যাকে নন- অ্যালকোহলিক লিভার সিরোসিস বলা হয় ।

অটোইমিউন হেপাটাইটিস

কখনো কখনো আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম লিভারকে আক্রমন করে যার ফলস্বরূপ লিভার সিরোসিস হতে পারে ।

তাছাড়া উইলসনের রোগ, বিলিয়ারি সিরোসিস এর কারনে এবং মেথোট্রেক্সেট বা আইসোনিয়াজিড সহ বিভিন্ন ওষুধ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় লিভার সিরোসিস হতে পারে ।

লিভার সিরোসিস এর লক্ষণ

▪কম খিদে পাওয়া।

▪ক্লান্তি।

▪দ্রুত ওজন কমাতে থাকা।

▪পেটের ওপরে ডান দিকে হালকা ব্যাথা।

▪বমি বমি ভাব।

▪শরীর এর মাংসপেশি বা শিরা ফুলে ওঠা।

▪ত্বক বা চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া বা বার বার জন্ডিস হওয়া।

▪বিভ্রান্তি বা পরিষ্কার চিন্তা করতে অসুবিধা হওয়া।

▪খুব অল্প ক্ষততে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া বা সহজে

 ▪রক্ত বেরনো।

▪ত্বক চুলকানো।

▪সাধারণের থেকে ঘন প্রস্রাব হওয়া।

▪পেট বা পা ফুলে ওঠা।

যদি এই রোগ সঠিক সময় তে ধরা পড়ে তবে সেটা চিকিৎসা পদ্ধতি দ্বারা সারিয়ে তোলা সম্ভব।

আপনার রক্ত যদি লিভারের মধ্যে দিয়ে যেতে অক্ষম হয় তবে এটি খাদ্যনালীর মত অন্যান্য শিরাগুলির মাধ্যমে একটি ব্যাকআপ তৈরি করে। এই ব্যাকআপ কে এসোফেগাল ভ্যারাইসেস (esophageal varices) বলা হয়। এই শিরাগুলি বেশি চাপ সহ্য করতে পারে না তাই অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহর ফলে আপনার শরীর ফুলে ওঠে।

সিরোসিসের চিকিৎসা পদ্ধতি আলাদা আলাদা হতে পারে। আপনার মধ্যে কোন লক্ষণগুলি দেখা যাচ্ছে বা ব্যাধি টা কতদূর অগ্রসর হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা পদ্ধতিতে পরিবর্তন হয়। চিকিৎসার মধ্যে রয়ছে ওষুধ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং অস্ত্রপ্রচার।

Health consultation

লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা

অ্যালকোহল কম পরিমাণে খাওয়া বা বন্ধ করা, সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং সাথে পর্যাপ্ত ব্যায়াম করা এই রোগকে বাড়তে দেয় না। 

অন্যান্য কিছু প্রতিরোধ পদ্ধতি হল-

  • অবৈধ ওষুধ এড়িয়ে চলতে হবে।
  • ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা।
  • রোগ সংক্রান্ত কোনো উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারকে জানানো।

লিভার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং একবার লিভারের রোগের কারণে দাগ পড়তে শুরু করে সেই ক্ষতি নির্মূল করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র চিকিৎসার মাধ্যমে লিভারকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়। যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হয় তবে লিভার কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে এবং তাতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। যদিও সিরোসিস সবসময় এড়ানো যায় না তবে এটি প্রতিরোধের উপায় রয়েছে। 

লিভার সিরোসিসে ডায়েট 

পুষ্টিবিদরা  লিভার সিরোসিস এ উচ্চ কার্বোহাইড্রেট , মাঝারি প্রোটিন এবং কম ফ্যাট যুক্ত খাবারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন । 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

You cannot copy content of this page