Tuberculosis disease

যক্ষ্মা রোগের কারন, লক্ষণ এবং প্রতিকার

যক্ষ্মা বা টিবি একটি ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমিত রোগ, যা সাধারণত আপনার ফুসফুস কে নষ্ট করে দিতে পারে। এ ছাড়া মানুষের মস্তিষ্ক বা অন্য অঙ্গেও এই রোগ ছড়িয়ে সেটা নষ্ট করে দিতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে যক্ষ্মা খুব মারাত্মক একটি শারীরিক ব্যাধি হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওষুধ এবং সাধারণ চিকিৎসা দ্বারা এই রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ গুলি কি কি?

যক্ষ্মা রোগ সৃষ্টি হয় মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম ব্যাক্টেরিয়া থেকে। প্রথিমিক অবস্থায় এই রোগের কোনো স্বাভাবিক উপসর্গ আনুভব করা যায় না। এই ব্যাক্টেরিয়া থকে সক্রিয় যক্ষ্মা রোগ পরিণত হওয়ার আগে এটা বছরের পর বছর শরীরে নির্মূল অবস্থায় থাকে এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

সক্রিয় যক্ষ্মা রোগের সাধারণ অনেক উপসর্গ দেখা যায় যা মূলত আমদের শ্বাসযন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়াও এই ব্যাক্টেরিয়া কোথায় বৃদ্ধি পেয়েছে তার ওপর নির্ভর করে শরীরের অন্যান্য অংশ কেও প্রভাবিত করতে পারে।

ফুসফুসে যক্ষ্মা হলে যে লক্ষণ গুলি দেখা যায় তা হল –

◆৩,৪ সপ্তাহ ধরে কাশি থাকা।

◆কাশির সাতে কফ বা রক্ত বেরিয়ে আসা।

◆ বা বুকে ব্যাথা।

Tuberculosis symptoms in bengali

এ ছাড়াও সাধারণ টিবির লক্ষণ গুলির মধ্যে রয়ছে-

◆প্রচন্ড শারীরিক ক্লান্তি।

◆অস্বাভাবিক শরীর দুর্বল হয়ে পড়া।

◆বার বার জোর আসা।

◆বেশি ঘাম হওয়া।

◆ওজন কমে যাওয়া

এই সব সাধারণ লক্ষণ ছাড়া যক্ষ্মা রোগ শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়লে আপনার প্রস্রাব এ রক্ত দেখা যেতে পারে, এ ছাড়াও যক্ষ্মার ফলে আপনার কিডনি খারাপ হয়ে যেতে পরে, অথবা আপনি মেরুদন্ড জনিত রোগ এর কবলে পড়তে পারেন। এ ছাড়াও আপনার মস্তিষ্কের বিকাশে অবকাশ ঘটাতে পারে যক্ষ্মা। এর ফলে আপনি পিঠে ব্যাথা, বমি বমি ভাব বা মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির লক্ষণ অনুভব করতে পারবেন।

যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় করার উপায় গুলি কী ?

কোনো ডাক্তার আপনার রক্ত এবং ত্বক এর বিভিন্ন পরীক্ষা দ্বারা এই রোগ নির্ণয় করতে পারে। যদিও এই পরীক্ষা গুলি দ্বারা যক্ষ্মা রোগ আপনার শরীরে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় নাকি সক্রিয় অবস্থায় রয়ছে তা বোঝা সম্ভব নয়। 

তাই আপনার শরীরে টিবি থাকে সেটা সক্রিয় কিনা সেটা নির্ধারণ করবার জন্য ডাক্তার থুতু পরীক্ষা এবং আপনার বুকের xray করবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

যদি থুতু পরীক্ষা করে টিবি পসিটিভ আসে তবে আপনার শরীর থেকে সেই রোগ অন্য মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা প্রবল ভাবে বেড়ে যায়। তাই চিকিৎসা শুরু করে টিবি রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়া অব্দি আপনাকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

এই পরীক্ষাগুলোর ফলাফল স্পষ্ট না থাকলে অন্যান্য পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে যেমন বুকের সিটি স্ক্যান বা ফুসফুসের বায়োপসি।

আরও পড়ুন – মেথির এই উপকারিতা গুলি জানা থাকলে আপনিও সুস্থ থাকতে পারবেন ।

যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধের বা চিকিৎসার উপায় কি ?

  • প্রাথমিক সংক্রমনে এই রোগ শনাক্ত করা গেলে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক এর সাহায্যে টিবির প্রাথমিক চিকিৎসা সম্ভব।
  • অ্যান্টিবায়োটিক এর ধরন বা চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীর বয়স এবং শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল।
  • এ ছাড়াও টিবি সক্রিয় নাকি নিষ্ক্রিয় বা সেই রোগ শরীরের কোথায় হয়ছে এই সব কিছু ভিত্তিতে চিকিৎসা নির্ভর করে থাকে। সাধারণ পর্যায় টিবি হলে ৬ থেকে ৯ মাস টানা অ্যান্টিবায়োটিক ও বিবভিন্ন ওষুধ চলে।
  • চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরে রোগের লক্ষণ গুলি চলে গেলেও সম্পূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি পূরণ করা বাধ্যতা মূলক। কারণ পুরো চিকিৎসা সম্পূর্ণ না হলে যক্ষ্মার ব্যাক্টেরিয়া আবার ফিরে আসে শরীরে এবং সেটা ফেরত এলে সংক্রমণের প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং পুরনো অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা আবার সেটা কে নির্মূল করা সম্ভব থাকে না।
  • যক্ষ্মা থেকে প্রতিরোধ থাকার উপায় হলো প্রাথমিক ভাবে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা। টিবি সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে বেশি না যাওয়া, এবং মাস্ক ব্যবহার করা আপনাকে এই রোগের সংক্রমণের হাত থেকে নিরাপদ রাখতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তদের সক্রিয় টিবি হবার সম্ভবনা বেশি থাকে।
  • সক্রিয় টিবি সংক্রমণের উপযুক্ত চিকিৎসা সঠিক সময়ে না হলে একজন মানুষ মৃত্যু সম্মুখীন হতে পারে।
  • যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ শনাক্ত হলে এই রোগ চিকিৎসা যোগ্য। তাই আপনি যদি কোনো যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসেন বা কোনো উপসর্গ লক্ষ করেন তাহলে তাড়াতাড়ি একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। 
  • যক্ষ্মা বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর শীর্ষে থাকা ১০ টি কারণের মধ্যে একটি কারণ বলে ধার্য করা হয়। আপনার যদি সন্দেহ হয় বা কোনরকম উপসর্গ দেখা দেয় অবিলম্বে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের সহায়তা নিন। আর মাস্ক ব্যবহার করুন যাতে আপনার থেকে এই রোগ অন্য কারুর শরীরে সংক্রমিত না হয়।

1 thought on “যক্ষ্মা রোগের কারন, লক্ষণ এবং প্রতিকার”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

You cannot copy content of this page

Scroll to Top