নারীদের ওভারি বা ডিম্বাশয়ে সিস্ট হওয়া বর্তমানে একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইদানিং অনেক নারী এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণত ৫০ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। মূলত ডিম্বাশয়ে পানিপূর্ণ থলেকে ওভারিয়ান সিস্ট বলা হয়। মেয়েদের ডিম্বাশয়ে সিস্টের কথা বেশি শোনা গেলেও স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে শরীরের বিভিন্ন জায়গাতেই সিস্ট হতে পারে।
সিস্ট মানে টিউমর, কিন্তু টিউমর মানেই ক্যানসার নয়। টিউমর ম্যালিগন্যান্ট ও বিনাইন দু’রকম হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিস্ট বিনাইন। সিস্টের দেওয়াল মোটা হলে, তার মধ্যে অনেক পার্টিশন থাকলে, ওই পার্টিশন কোথাও পাতলা কোথাও মোটা হলে, সিস্টের মধ্যে মাংসপিণ্ড থাকলে, সিস্টে রক্ত চলাচল হলে তা ম্যালিগন্যান্সির লক্ষণ।
মহিলাদের ওভারিয়ান সিস্ট হওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা এবং তার কোনও উপসর্গ নাও দেখা যেতে পারে, অর্থাৎ দীর্ঘদিন উপসর্গহীন অবস্থায় থাকতে পারে। এই অবস্থার সাধারণ ইঙ্গিত হচ্ছে তলপেটে ব্যাথা, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, এবং আকস্মিক ওজন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদিয়
ওভারিয়ান সিস্টের কারণ
• অনিয়মিত ঋতুচক্র
• বন্ধ্যাত্ব
• বংশগত ইতিহাস
• 12 বছর বা তার চেয়ে কম বয়সে ঋতুচক্র শুরু হলে
• হরমনাল ইমব্যালান্স
• শরীরের উপরের অংশে বেশি মেদ জমলে
ওভারিয়ান সিস্টের লক্ষণ
ওভারি সিস্ট হলে খাওয়ার অরুচি হয়। ওজন বেড়ে যেতে পারে। যদি এর কারণে ক্যানসার হয় তখন ওজন কমে যেতে পারে। কিছু সিস্টের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে।
●তলপেটে ব্যাথা, তা তীব্র বা মন্দমন্দ হতে পারে।
●বমিভাব বা বমি করা।
●ক্ষুধামান্দ্য।
●পেট কষে যাওয়া (কনস্টিপেশন)।
●অনিয়মিত ঋতুস্রাব।
●তলপেট ফুলে ওঠা এবং নরম বা টেন্ডার হওয়া।
ওভারিয়ান সিস্টে কী করণীয়
চিকিৎসকরা বলেন, ওভারিয়ান সিস্টের অন্যতম কারণ অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অনিয়মিত লাইফস্টাইল। ডিম্বাশয়ে সিস্ট কমাতে হলে ব্যায়াম করতে হবে , ভাজাভুজি খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়াও, বেশ কিছু খাদ্য নিয়মিত খেয়ে যেতে হবে এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।
খাওয়াদাওয়া
যদি এখনই আপনার ওভারিয়ান সিস্ট হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে সুষম খাদ্য খাওয়ার বিষয়ে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। ফের যাতে সিস্ট গঠন না হয় তার জন্য আপনার খাদ্যের মধ্যে অবশ্যই থাকতে হবে ফল, সবজি, শস্য। এই খাদ্যবস্তুগুলি ফাইবারসমৃদ্ধ, যা প্রাকৃতিক উপায়ে সিস্ট নিরাময়ে সাহায্য করে এবং বারবার সিস্ট গঠনের পথে বাধার সৃষ্টি করে।
1.সাদা রুটি /সাদা আলু /সাদা ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
2.পেস্ট্রি, ডেজার্ট, মাফিন এবং অন্যান্য চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে।
3. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার সিস্ট কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার নিয়মিত পান করলে সিস্ট কমে যেতে পারে। তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।
4.কাজুবাদাম খেলে ওভারিয়ান সিস্টের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কারণ কাজুবাদামে থাকা ফ্যাটি এসিড সিস্টের বৃদ্ধি ও হরমনের ব্যালেন্স বজায় রাখে।
5.ওভারিয়ান সিস্টের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করতে কিছু কিছু খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদের মধ্যে রয়েছে অ্যালোভেরা জুস, গ্রীনটি এবং আমলা জুস।
6.ডাব বা নারকেলের জল ও ওভারিয়ান সিস্ট প্রতিরোধে বেশ উপকারী।
প্রতিদিনের খাবার খাদ্যতালিকায় এমন খাবার যোগ করতে হবে যা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধের সাথে লড়াই করতে সহায়তা করে। এমন স্বাস্থ্যকর খাদ্যগুলির মধ্যে রয়েছে:
1.ব্রকলি
2.সবুজ শাক সবজি, বেরি জাতীয় উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার
3.ছোট মাছ এবং মুরগি সহ চর্বিহীন প্রোটিন
4.টমেটো, হলুদ, তেল এবং বাদাম
ওজন নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত ওজনের জন্যও ওভারিয়ান সিস্টে আক্রান্ত হচ্ছেন মহিলারা। মেদ ঝরিয়ে ফেলতে হবে।
ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট
হরমোনের ব্যালান্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে কিছু ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট। ভিটামিন E, ফ্লাক্সসিড অয়েল, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন B তার মধ্যে অন্যতম।
প্রচুর পরিমাণে জলপান
বেশি পরিমাণে তরল, বিশেষ করে জল বেশি পান করলে তা শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। দিনে 7-8 গ্লাস জল খেলে শরীর থেকে যাবতীয় টক্সিন বার হয়ে যাবে এবং প্রদাহ কমবে।
ধূমপান ত্যাগ
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে সব মহিলা ধূমপান করেন তাঁদের বেশি ওভারিয়ান সিস্ট গঠন হয়ে থাকে। কাজেই যে কোনও মূল্যে অতিরিক্ত ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকা উচিত।
ক্যাফিন গ্রহণ সীমিত করুন
ক্যাফিনের কারণে ওভারিয়ান সিস্ট গঠন বাড়ে। কাজেই ক্যাফিন গ্রহণ সীমিত করুন।
চিনি খাওয়া কমান
অতিরিক্ত চিনি খেলে ফোলা এবং প্রদাহ বাড়বে। যদি আপনি সিস্ট থেকে ইতিমধ্যেই কষ্ট পাচ্ছেন তাহলে চিনির কারণে ব্যাথা বাড়বে। কাজেই, চিনি খাওয়া কম করতে হবে।
ব্যায়ামের জন্য নির্দিষ্ট সময়
যোগাভ্যাস করলে এবং অন্যান্য স্ট্রেচিং ব্যায়াম করলে শুধু ওভারিয়ান সিস্ট নিরাময়ে সাহায্য হবে না, ঋতুস্রাবের অসুবিধাগুলিও, যেমন ঋতুস্রাবের যন্ত্রণা এবং পেটে এবং পিঠে খিল ধরা কমে যাবে। নিয়মিত ব্যয়াম করলে মানসিক চাপের মাত্রাও কমে যাবে এবং ওভারিয়ান সিস্ট কমে জাওয়ার কারণে সারা শরীরে আরাম বোধ হবে।
বিশ্রাম
মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা- র কারণে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে বলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। এই কারণে, নিরুদ্বেগ জীবনের জন্য যে সব কৌশল অবলম্বন করতে হবে তার মধ্যে আছে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া, ধ্যান করা, ব্যায়াম করা, বা কোনও থেরাপি করানো, যাতে শরীর এবং মন একটি ভারসাম্যের অবস্থানে থাকতে পারে।
তাপ বা সেক
তাপ রক্ত প্রবাহ বাড়ায়, ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। একটি হিটিং প্যাড বা গরম জলের বোতল তোয়ালে জড়িয়ে পেটে বা পিঠের নিচের দিকে প্রায় ২০ মিনিটের জন্য লাগানোর চেষ্টা করতে হবে। এটি দিনে 2 থেকে 4 বার করা যেতে পারব তবে হিটিং প্যাড নিয়ে ঘুমানো যাবে না।
ওভারিয়ান সিস্ট যদি বংশীয় হয়ে থাকে তবে এর ঝুঁকি অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে সন্তান গ্রহণের পর ডিম্বাশয় কেটে ফেলে দেয়া নিরাপদ। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।ওভারিয়ান সিস্ট নিয়ে দুশ্চিন্তায় না থেকে এটি নিয়ে সচেতনতা জরুরী। নিয়মিত হেল্থচেক আপ আর সচেতনতাই পারে ওভারিয়ান সিস্টের মতো সমস্যা থেকে একজন নারীকে দূরে রাখতে।
Dietician (9 yrs experience in Maternal & Child Health) Formerly attached with Bansgarh Rural hospital , Purulia ( 2013 Feb to 2022 Apr) Bhagirothi Neotia women and child care center, Park Street, Kolkata AMRI , Chakuri, kolkata