গ্রীষ্মে তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে সেক্ষেত্রে শরীরের যত্ন বিশেষ দরকার।এই তীব্র গরমে তেলমসলা যুক্ত খাবার একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। শরীর কে সুস্থ চনমনে রাখতে চাই হালকা সেদ্ধ, সহজপাচ্য বাড়ির খাবার। তাই আজ আলোচনায় রইল গ্রীষ্মের শাক-সবজি ।
সবজি
এই সময়ে মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, শসা, গ্রীষ্মকালীন টমেটো, পটল, করলা ও চিচিংগা বেশি পাওয়া যায় বাজারে। তবে বিভিন্ন ধরনের কচু, কাঁকরোল, বেগুন, ঢ্যাঁড়স ও পাওয়া যায়। শসা, টমেটো, পটল, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, কাকরোল ইত্যাদি গ্রীষ্মকালীন সবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, মিনারেল ও ভিটামিন A,C সহ নানান উপাদান।এই সব সবজিতে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকায় পরিমাণে একটু বেশি খেলেও শরীরের তেমন ক্ষতি হয় না।
গ্রীষ্মকালীন সবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণে পানিয়। যা গরমকালের জন্য বেশ উপকারী। এ সময়ে ঘাম বেশি হওয়ায় শরীর থেকে প্রয়োজনীয় অনেক ‘নিউট্রিয়েন্ট’ ঘামের সঙ্গে বের হয়ে যায়। ফলে শরীরে ভিটামিন, মিনারেলের ঘাটত হয়।সবজিতে থাকা ভিটামিন C দেহে কোলাজেন তৈরি করে মজ্জা গঠনে সাহায্য করে। যা আর্থ্রাইটিস কমায়।এছাড়া সবজিতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন C ও ভিটামিন E ত্বককে সূর্যের ক্ষরিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সুরক্ষা করে। পাশাপাশি এর ‘অ্যান্টি-এইজিং প্রোপার্টি’ ত্বকে বয়সের ছাপ ফেলতে দেয় না।
শাক
গ্রীষ্মকালীন শাকগুলোর মধ্যে ডাটাশাক, লালশাক, পাটশাক, পুঁইশাক ও কলমিশাকই প্রধান। পাশাপাশি নটেশাক, হেলেঞ্চা ও এই সময়ে পাওয়া যায়।শাকে প্রচুর পরিমাণে ফলেট, ফাইবার, ভিটামিন A,C,E ,অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিনয়েডে (carotenoid) থাকে । ক্যারোটিনয়েড শরীরের ভিটামিন এ তৈরিতে সহায়তা করে।প্রতিদিনের প্রয়োজন অনুসারের শাক খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা, রক্তচাপ কামানোসহ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে শাক। পাশাপাশি স্তন, ত্বক, পাকস্থলী ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়তা করে।
তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শাক খাওয়া শরীরের জন্য ঠিক নয় ব। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা ও হজমে সমস্যা হতে পারে।শরীরের পাশাপাশি মন ভালো রাখতেও বেশ কার্যকর এসব শাক। এক্ষেত্রে শাকে থাকা ফলেট উপাদান শরীরে সেরোটিন(Serotonin) উৎপাদন করে। যা হতাশা কমাতে সাহায্য করে।
ফল
শরীরের ভিটামিন, মিনারেল, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদির চাহিদা মেটাতে ফল বিশেষ ভূমিকা রাখে। গ্রীষ্মের জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে আম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, পেঁপে,আনারস, কামরাঙ্গা, ফুটি তালশাঁস অন্যতম। চিকিৎসকদের মতে একজন মানুষের দিনে কমপক্ষে ১00 গ্রাম ফল খাওয়া উচিত। অনেক সময় বিভিন্ন ফলের শরবত ও শরীরের অনেক পুষ্টি মেটাতে সাহায্য করে।
নানা ফলের রয়েছে নানান পুষ্টিগুণ। বয়স, শারীরিক অবস্থা, রোগ ভেদে নিয়মিত ও সঠিক মাত্রায় ফল খেলে তা শারীরিক অনেক রোগব্যাধির ক্ষেত্রেও উপকারী। আবার যাদের কিডনির রোগ রয়েছে, তাদের ফলমূল খাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হয়।সব ফলের মধ্যেই জলের পরিমাণ বেশি থাকে। সেই কারণে গরমের সময় শরীরের জলশূন্যতা পূরণে এটি সহায়তা করে।সব ফলের মধ্যেই পানির পরিমাণ বেশি থাকে। সেই কারণে গরমের সময় শরীরের পানিশূন্যতা পূরণে এটি সহায়তা করে।
ফলমূল শরীরের জন্য উপকারী হলেও সব ফল ইচ্ছামতো খাওয়া যায়না।যেমন ডায়াবেটিস রোগীদের মিষ্টি ফল হিসাব করে খেতে হবে, তেমনি কিডনি রোগীদের ফলমূল পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।কিছু ফল খেয়ে হজম হতে সময় লাগে। সেসব ফল খেয়ে শুয়ে পড়লে অনেকের অস্বস্তি ভাব হতে পারে, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
আমরা রোজ যা যা খাই, তারই উপর নির্ভর করে আমাদের শারীরিক সুস্থতা। তাই প্রাচীনকাল থেকেই গ্রীষ্মপ্রধান দেশে মেনে চলা হয় বিশেষ খাদ্যতালিকা। তাই নিয়মিত পাতে ফল শাক সবজি থাকলে শরীর সুস্থ থাকবেই।
Dietician (9 yrs experience in Maternal & Child Health) Formerly attached with Bansgarh Rural hospital , Purulia ( 2013 Feb to 2022 Apr) Bhagirothi Neotia women and child care center, Park Street, Kolkata AMRI , Chakuri, kolkata