Population Day

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ! আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ভারত চিন কে পেরিয়ে পৃথিবীর জনবহুল দেশে পরিনত হবে

প্রতিবছর ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত হয়। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পরিচালনা পরিষদের মাধ্যমে এই দিবসটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৯ সালের ১১ জুলাই ঠিক যখন বিশ্ব জনসংখ্যা প্রায় ৫০০ কোটি হতে চলেছিল। বিশ্ব জনসংখ্যার বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে প্রতিবছর মানুষকে সচেতন করাই এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য। বিশেষ করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব, লিঙ্গ ভারসাম্য, দারিদ্র, মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য এবং মানবাধিকার বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন করাই এই দিবসের মুখ্য উদ্দেশ্য।১৯৮৯ সালে যখন প্রথমবার এই দিনটি পালিত হয়, তখন বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ৫২৫ কোটি। ৩০ বছর পরে সেই সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ৭৭০ কোটিতে।

বিভিন্ন গবেষণায় বলছে এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ভারত চিন কে পেড়িয়ে পৃথিবীর জনবহুল দেশে পরিনত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ –

1.বহুবিবাহ ও বাল্য বিবাহ – ভারতীয় সমাজের সর্বত্র এখনও শিক্ষার আলো পৌছায়নি। ভারতীয় সমাজে মেয়েদের স্বাধীনতা কম বলে তাদের মতামত না নিয়েই খুব অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়  আবার কোন কোন ধর্মে বহুবিবাহ কে মান্যতা দেওয়া হয় বলে জন্মহার বেড়ে গিয়ে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটায়। 

2.প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যার আধিক্য- ভারতে ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি আর এই প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যার প্রজনন ক্ষমতা বেশি থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের জনসংখ্যায় অনেকটাই বেশি । 

3.বেকারত্ব ও দারিদ্রতা – ভারত একটি কৃষিনির্ভর উন্নয়নশীল দেশ । এখানে শিল্পের বিকাশ এখনো তেমন ভাবে সম্ভব হয় নি। তাই মানুষের কাজের সুযোগ কম বলে বেকারত্ব তথা দারিদ্রের হার অনেক বেশি। বেকারত্বের জন্য মানুষ বেশি অবসর সময় বারিতেই থাকে আবার দারিদ্রতার জন্য মানুষের অন্য কোন আনন্দ বা বিনোদনের মাধ্যমও থাকে না।তাই ভারতে দারিদ্রতা ও বেকারত্ব ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

4.চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি – স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ভারতে চিকিৎসা ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। ফলে ম্যালেরিয়া, কলেরা, গুঁটি বসন্ত এই সব রোগে আগে প্রচুর মানুষ মারা যেত, তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি মৃত্যুহার কে কমিয়ে দিয়ে জনসংখ্যায় বৃদ্ধি তে সহযোগিতা করেছে। 

5.খাদ্য বা পুষ্ঠির সরবরাহ – স্বাধীনতা আগে প্রচুর মানুষ খাদ্যের অভাবে অপুষ্ঠি জনিত কারণে মারা যেত, কখনো কখনো দুর্ভিক্ষ দেখা যেত, তখন অনেক মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যেত কিন্তু ১৯৬০ এর দশকে সবুজ বিপ্লবের ফলে সকল মানুষকে খাদ্য পৌছে দেওয়া সম্ভব হয় বলে খাদ্যাভাব জনিত কারণে মানুষের মৃত্যুহার কমে যায়, মৃত্যুহারের পরিবর্তন জনসংখ্যা বৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলে। 

6.পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থার অভাব – ভারতীয় জনসাধারনের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। একটি বড়ো পরিবারের থেকে যে ছোট পরিবার অনেক সুখের তা মানুষ জন এখনো অনুধাবন করতে সক্ষম হয় নি। আর এই জ্ঞানের অভাব ভারতে জনসংখ্যা কে বাড়িয়ে দিচ্ছে। 

7.পুত্র সন্তানের আকাঙ্খা – ভারত পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় এখানে কন্যা সন্তানের তুলনায় পুত্র সন্তানের চাহিদা বেশি। এই পুত্র সন্তানের চাহিদাই ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ । 

8.শিক্ষার অভাব – ভারতে স্বাক্ষরতার হার অনেক কম, মোট জনসংখ্যার একটি বড়ো অংশ অশিক্ষিত। এই অশিক্ষিত বা নিরক্ষর জনসাধারন জন্ম নিয়ন্ত্রনের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে এখনো সঠিক ভাবে জানে না। তাই তারা জন্ম নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হয় না। 

9.কৃষিনির্ভর সমাজ – ভারত কৃষি নির্ভর দেশ । দেশের প্রায় ৬৫% মানুষ এই কৃষি কাজের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত। আর কৃষিতে প্রয়োজন পড়ে প্রচুর শ্রমিকের । তাই কৃষি নির্ভর পরিবার গুলিতে  কৃষিতে শ্রমিকের সরবরাহ করার জন্য বেশি জন্মদানের প্রবনতা দেখা যায়। 

10.স্বাস্থ্য ও পুষ্ঠির অভাব – আমেরিকা ও ইউরোপের মতো উন্নত দেশ গুলি তুলনায় ভারতীয় মহিলারা  স্বাস্থ্য ও পুষ্ঠিগত দিক থেকে অনেকটাই রোগা প্রকৃতির। আমেরিকার ওই স্বাস্থ্যবান মহিলাদের থেকে ভারতীয় মহিলারা অনেক বেশি সন্তান ধারনে সক্ষম। 

11.অনুপ্রবেশ ও শরনার্থীর আগমন – ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্য গুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হল অনুপ্রবেশ ও স্বাধীনতার সময় প্রচুর পরিমান মানুষের ভারতে প্রবেশ। এমনি কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ও প্রচুর পরিমানে মানুষ সেখানে থেকে ভারতে প্রবেশ করে ভারতের জনসংখ্যা অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। 

12.সরকারী প্রচেষ্ঠার অভাব – চিন সরকারের মতো ভারত সরকারের মধ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন মূলক আইন বা নীতি প্রেরনের কোন সদিচ্ছা দেখা যায় না। তাই ভারতের জনসংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। 

    প্রতিটি কারণ জন্মহার ও মৃত্যুহার কে বাড়িয়ে বা কমিয়ে জনসংখ্যার বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে। এই জন সংখ্যাকে নিয়ন্ত্রনের জন্য ভারত সরকার কে অবশ্যই  কঠোর কোন  পদক্ষেপ নিতে হবে আর তার সঙ্গে মানুষকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল গুলি সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। 

You cannot copy content of this page

Scroll to Top