Copy of Add a little bit of body text 14 min

বর্ষাকালীন সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিলেন ডায়েটিশিয়ান সৌম্যশ্রী

এসেছে বর্ষাকাল। এই সময় প্রকৃতি সুন্দরভাবে সেজে উঠলেও, শারীরিক নানান অসুস্থতায় কাবু হতে হয় কমবেশি সবাইকে। বর্ষার মৌসুমে বেড়ে যায় অনেক রোগের প্রকোপ। যখন-তখন বৃষ্টির হওয়ার কারণে বর্ষাকালে আবহাওয়া সবসময় আর্দ্র থাকে।বৃষ্টি হলে পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদির সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়।আর ঠিক এই কারণেই বর্ষাকালে বায়ুবাহিত, জলবাহিত এবং মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই বর্ষার মৌসুমে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে অনেক যত্নবান হতে হবে।বাইরের খাবার খেলেও সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। খারাপ ফল ও সবজিও এই মৌসুমে শরীরকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান এবং রোগ থেকে দূরে থাকতে চান, তাহলে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

বর্ষায় রোগব্যাধির প্রকোপ একটু বেশি দেখা যায়।  ফ্লু, সংক্রমণ, ফাঙ্গাল ইনফেকশন ইত্যাদি এই সময়টায় বেড়ে যায়।  তাই এ সময় এমন কিছু খাবার নির্বাচন করা জরুরি, যেগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।

1.গরম স্যুপ -বর্ষার সময় খাদ্যতালিকায় থাকতে পারে গরম গরম স্যুপ। এটি  হজমের সমস্যা এবং পাকস্থলীর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। সবজির স্যুপের মধ্যে মেশাতে পারেন রসুন ও গোলমরিচ। এগুলো যেমন স্যুপের স্বাদ বাড়াবে, তেমনি ঠান্ডা ও ফ্লু কমাতে কাজ করবে। এটি গলার অ্যালার্জি প্রতিরোধেও উপকারী।   

2. মসলা চা- মসলার চা বর্ষায় আপনাকে সতেজ করতে কাজ করবে। এই চায়ের মধ্যে যোগ করুন দারুচিনি, আদা, তুলসী। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এ ধরনের চা ঠান্ডা ও গলার ইনফেকশন কমাতে উপকারী।

3.তুলসী- তুলসী অ্যান্টিবায়োটিক গুণসম্পন্ন। দশ থেকে পনেরোটা তাজা তুলসী পাতা এক চামচ লবঙ্গ চূর্ণের সঙ্গে মিশিয়ে এক লিটার জলে ঢেলে ফুটিয়ে ছেঁকে ঠাণ্ডা করে বারে বারে পান করলে ভাইরাল ফিভার দ্রুত সারে।

4.আদা-  ইমিউন সিস্টেম মজবুত করতে শাকসবজি, স্যুপ, চা ইত্যাদিতে মিশিয়ে আদা খান নিয়মিত।

5.হলুদ- হলুদে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। এক চামচ গোল মরিচের গুঁড়ো আর হলুদ গুঁড়ো এক কাপ গরম জলে মিশিয়ে নিন। এই জল ঠাণ্ডা করে খেয়ে ফেলুন। 

■রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যা যা খাবেন

  1. প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ জল খেতে হবে।
  2. প্রত্যেক দিনের খাবারের তালিকায় অবশ্যই দই রাখতে হবে।
  3. প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় প্রোটিনজাতীয় খাবার যেমন, ডিম, মুরগির মাংস রাখতে হবে।
  4. রান্নার আগে সমস্ত শাক-সবজি ভালো করে ধুয়ে নেওয়া খুবই জরুরি।
  5. যে সমস্ত খাবারে ওমেগা থ্রি রয়েছে, তা তালিকায় রাখা জরুরি।
  6. প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে ডিম, দুধ এবং সবুজ শাক-সব্জিতে। খাবারের তালিকায় অবশ্যই এগুলো রাখা প্রয়োজন।
  7. গ্রিন টি খেতে পারেন।
  8. বায়োফ্লোবোনয়েড, সেলেনিয়াম, জিংক, ভিটামিন সি’ ও ভিটামিন ই’ তে ভরপুর বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন কাঠবাদাম, হ্যাজেলনাট, ওয়ালনাট, ক্যাশুনাট ইত্যাদির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

বাচ্চারা বর্ষায় সহজেই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বর্ষায় যে সমস্ত রোগ হয় এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ খুব কঠিন কিছু নয়।

■বর্ষায় বাড়তি সতর্কতা-

1.বর্ষায় ঘন ঘন বৃষ্টিতে ভেজা চলবে না।

2.কোন কারণে বৃষ্টিতে ভিজলে আবার স্নান করতে হবে। এতে শরীরে কোন রোগ জীবাণু লেগে থাকলে তা দূর হবে। ফলে রোগের মাত্রা কমে আসবে।

3.স্নানের জলে জীবাণুনাশক মিশিয়ে নিলে ত্বকের সংক্রমণও দূর হবে ৷

4.পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বর্ষায় খুবই জরুরি। নিয়মিত হাত পা পরিষ্কার রাখতে হবে। এতে ফাঙ্গাল ইনফেকশন কম হবে।

5.বর্ষাকালে জামাকাপড় শোকানো সমস্যাজনক ৷ জামাকাপড় শুকিয়ে গেলেও রয়ে যায় স্যাঁতস্যাঁতে ভাব৷ এর থেকেও ঠান্ডা লেগে যেতে পারে৷ তাই প্রতি বার পরার আগে জামাকাপড় ইস্ত্রি করে নিলে ভালো।

6.বর্ষার দিনে রেইন কোট বা ছাতা ব্যবহার করতে হবে। 

7.সব কাজে বিশুদ্ধ পানি ব্যাবহার করা শ্রেয়। রান্না করার আগে শাক-সবজি ভাল ভাবে ধুয়ে নিতে হবে। পঁচা বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।

■শিশুদের এ সব রোগ থেকে মুক্তি পেতে করণীয়: 

বর্ষাকালে সাধারণত শিশুরাই বেশি অসুখ-বিসুখের শিকার হয়। কারণ বড়দের তুলনায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা।

1. এ সময় শিশুকে অবশ্যই ফোটানো ও বিশুদ্ধ পানি পান করাতে হবে।  সামান্য সর্দি-কাশি ও জ্বরকে অবহেলা করা ঠিক হবে না, কারণ এর থেকে নিউমোনিয়া হয়ে শিশুর জীবন বিপন্ন হতে পারে। সর্দি-কাশি হলে শিশুকে লেবুর রস, তুলসী পাতার রস, ও আদা খাওয়ানো যেতে পারে।

2.শিশুকে মেঝেতে শোয়ানো যাবে না। বাড়ির আশেপাশের মশার আবাসস্থল ধ্বংস করতে হবে।

3.এই বর্ষাকালে গ্রামবাংলায় বন্যা হয়। তাই কোন অবস্থাতেই শিশুকে পুকুরে বা নদীতে নামতে দেয়া যাবে না বা স্নান করানো যাবেনা।

4.যথাসময়ে টিকা (রোটা ভাইরাসের টিকা) দেওয়া। সঠিক নিয়মে শিশুকে হাত ধোয়ানো এবং নখ কেটে দেওয়া। সর্বোপরি শিশুর পুষ্টিকর খাবারের দিকে নজর দিতে হবে, এতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

মোটকথা রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে সচেতন হতে হবে। তবে রোগে আক্রান্ত হয়ে গেলে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ্ নেওয়া এবং মেনে চলা অতি জরুরী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

You cannot copy content of this page