জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ ২০২২ : সুস্থ থাকার টিপস দিলেন ডায়েটিশিয়ান সৌম্যশ্রী

ভারতে প্রতি বছর ‘ন্যাশনাল নিউট্রিশন উইক’ ( National Nutrition Week ) বা ‘জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ’ পালিত হয় ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ সেপ্টেম্বর।  আমাদের দেশ, যেখানে এখনও জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ অপুষ্টিতে ভোগে, সে দেশে এই রকম একটি সপ্তাহ পালনের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা অপুষ্টিজনিত সংকটে ভোগে। এর জেরে জাতীয় স্বাস্থ্যের মানও অনেক নীচে নেমে যায়। এটা যে সব সময় দারিদ্র্যের কারণেই ঘটে, তা কিন্তু নয়। যথাযথ খাদ্যাভ্যাস বা পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণের বিষয়ে ওয়াকিবহাল না থাকটাও এর একটা বড় কারণ। ফলে এ দেশে পুষ্টি নিয়ে জনসচেতনতা প্রচারের গুরুত্ব থাকেই। এই প্রেক্ষিতে এই পুষ্টি সপ্তাহের বিশেষ তাৎপর্য।

জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ এর ইতিহাস

এটি আমেরিকান ডায়েটেটিক অ্যাসোসিয়েশনের ( ADA ) সদস্য 1973 সালের মার্চ মাসে শুরু করেছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল পুষ্টি শিক্ষা বার্তা প্রদানের মাধ্যমে ডায়েটিক্সের পেশাকে আলোকিত করা। ১৯৮২ সালে, ভারত সরকার ভারতে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ শুরু করে।

জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ এর গুরুত্ব

এই সপ্তাহটি মানুষকে পুষ্টির মাধ্যমে সঠিক খাদ্য এবং খাদ্য পছন্দ গ্রহণের বিজ্ঞান সম্পর্কে শিক্ষিত করার জন্য পালন করা হয়। 

জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ থিম 2022

ভারত সরকার প্রতি বছর জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের থিম ঘোষণা করে। 2021 সালে, ভারতে পুষ্টি সপ্তাহের থিম ছিল- ফিডিং স্মার্ট রাইট ফ্রম স্টার্ট । জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের এই বছরের থিম  2022 ল  ‘সেলিব্রেট এ ওয়ার্ল্ড অফ ফ্লেভার’।

খাবারকে সুস্বাদু করতে আমরা এতটাই মগ্ন থাকি যে, এর গুণাগুণের দিকে বিশেষ নজর দেয়া হয়না। রান্নায় তেল, ঘি ও মসলা পরিমাণে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়। ফলে খাবারের স্বাদ অতুলনীয় হলেও খাদ্যগুণ প্রায় থাকেনা বললেই চলে। কেবল স্বাদকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমরা একটা ভুঁড়ি বানাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু যেসব খাবার খাচ্ছি তার পুষ্টিগুণ দেহে পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। এজন্য অধিক খাবার গ্রহণের পরও আমরা নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। মুখরোচক খাদ্যের দিকে না ঝুঁকে আমরা যদি স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে দৃষ্টিপাত করি, তবে দেখা যাবে বেশ সহজ উপায়ে পরিমিত পরিমাণ খাবার খেয়ে আমরা প্রকৃতপক্ষে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে উঠব। অনেকের ধারণা, স্বাস্থ্যকর খাবার সুস্বাদু হয়না। কিন্তু স্বাদ এবং পুষ্টির সংমিশ্রণ ঘটালে তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া: দুধ থেকে তৈরি বিভিন্ন খাবার যেমন দই, পনির এবং আইসক্রিম- স্বাদে যেমন ভালো তেমনি পেটের জন্যও উপকারী। পাশাপাশি প্রোটিনে ভরপুর। তাছাড়া এ খাবারগুলো মুখরোচক হওয়ায় রুচি ফেরাতে সাহায্য করে। তাই অসুখের পর শরীরে বিভিন্ন পুষ্টির ঘাটতি পুষিয়ে তুলতেও এই ধরনের খাবার দরকার।

হালকা খাবার:  সহজপাচ্য খাবার খাওয়াই বেশি উপযোগী। সিদ্ধ ভাত, আলু ভর্তা, শুকনা টোস্ট ইত্যাদি সহজপাচ্য খাবার ভালো। 

ফ্লেইভারযুক্ত খাবার:  খাবারের স্বাদ বাড়াতে বাড়তি ফ্লেইভার যুক্ত করে নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের মসলা যেমন রসুন, আদা, গোলমরিচ, দারুচিনি, ভিনিগার, লেবুর রস, টমেটো ইত্যাদি যুক্ত করে খাবারে আলাদা স্বাদ আনা যেতে পারে।

তেলে রান্না: স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে রান্নায় তেলব্যবহার যতটা কম ব্যবহার করা যাবে তটাই ভালো। বেশি তাপে ও অল্প তেলে  দ্রুত রান্না করলে খাবারের রঙ ও গন্ধ ঠিক রাখা যায়। সেক্ষেত্রে ব্যবহার করতে  হবে উদ্ভিজ্জ তেল। যেমন-অলিভ অয়েল, সানফ্লাওয়ার ওয়েল।

তাপমাত্রা : খাবারের স্বাদের জন্য এটি  গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভালোভাবে গরম করা না হলে বা ঠান্ডা করা না হলে অনেক খাবার আর স্বাদ লাগে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে আমরা ঠান্ডা অবস্থায় সোডা, জুস ইত্যাদি পানীয় খেতে পছন্দ করি আবার সুপ, চা, কফি, পিঠা ইত্যাদি খাবার গরমাগরম খেতে পছন্দ করি।

এসব বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে খাদ্য থেকে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায়। এতে একদিকে অর্থ সাশ্রয় হয়, অন্যদিকে মুখরোচক খাদ্য তৈরি করা যায় এবং স্বাদেরও পরিবর্তন হয়। এ ক্ষেত্রে যাদের বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা আছে, তারা অবশ্যই খাদ্যগ্রহণে বিধি-নিষেধগুলো মেনে চলে খাদ্য বাছাই করবেন।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You cannot copy content of this page