পেপটিক আলসার মানবদেহের পাচনতন্ত্রের ( পাকস্থলীর ) একটি বিশেষ রোগ। এটি একটি ক্ষতজনিত সমস্যা। এটি পাকস্থলীর একটি রোগ, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগে ডিওডিনামের বৃহৎ অংশ ক্ষতিগ্ৰস্থ হয়।
পেপটিক আলসার এর কারন
- রোগ-জীবাণু : হেলিকোবেক্টার পাইলোরি নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া এ রোগের জন্য বহুলাংশে দায়ী।
- বংশগত – নিকটতম আত্মীয়-স্বজন এ রোগে ভুগে থাকলে তাদের পেপটিক আলসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের রক্তের গ্রুপ ‘ও’ তাদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি।
- ধূমপান – ধূমপায়ীদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি।
- অভ্যাসগত – যাদের বসে থাকার প্রবনতা বেশি,বা কাজকর্মের জন্য বেশি বসে থাকতে হয়,তাদের এই রোগের সম্ভাবনা বেশি।
- খাদ্যাভাস – অতিরিক্ত ভাজাভুজি বা তেল মশালাযুক্ত খাবার খাওয়ার জন্য ও এই রোগ হয়। খালিপেটে মিষ্টি জাতীয় খাওয়ার না খাওয়া ভালো।
পেপটিক আলসার এর লক্ষণ
এই রোগে সাধারণত পেটের ঠিক মাঝ বরাবর, নাভির একটু উপরে একঘেয়ে ব্যাথা অনুভব হয়। খালি পেটে বা অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার খেলে ব্যাথা বাড়ে। আলসার মারাত্মক হলে বমি হতে পারে। এন্ডোস্কোপি বা এক্স-রের মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা যায় এবং বাড়াবাড়ি হলে কোলোনোস্কপি ও করা হয়।
পেপটিক আলসার এর চিকিৎসা
- পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই ধূমপান বন্ধ করতে হবে।
- পেপটিক আলসারের রোগীরা সাধারণত এন্টাসিড, রেনিটিডিন, ফেমোটিডিন, ওমিপ্রাজল, লেনসো প্রাজল, পেনটো প্রাজল জাতীয় ওষুধ সেবনে উপকৃত হন। কিন্তু দীর্ঘদিন ওষুধ না খেয়ে নিজের খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে হবে।
- যোগ ব্যায়াম – নিয়মিত ৩০ মিনিট যোগ ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে।
পেপটিক আলসার এর ঘরোয়া চিকিৎসা
- জল – সকালবেলা খালিপেটে উষ্ণ গরম জল এই রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে
- বাঁধাকপি – বাঁধাকপির রস পেটের আস্তরণ জোরদার করবে এবং স্বাভাবিকভাবেই আলসার নিরাময় করতে সাহায্য করবে। এই রস প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করুন।
- মেথি পাতা – পাকস্থলীর আলসার নিরাময় করতে এক কাপ পানিতে মেথি পাতা ফোটান। এক চিমটি লবণ যোগ করুন। দিনে দু’বার এই উষ্ণ গরম পানিটি পান করুন পেট সুস্থ করার জন্য।
- কলা – কলা, পেটের আলসারের জন্য উপকারী। এতে ব্যাকটেরিয়ারোধী পদার্থ আছে যা স্বাভাবিকভাবেই পেটের আলসারের বৃদ্ধি মন্দীভূত করে।
- মধু – মধু পাকস্থলীর প্রদাহ হ্রাস করার জন্য উত্তম উপাদান। এছাড়াও মধু অন্যান্য রোগ রোধ করতে সাহায্য করে। অতএব, সকালে আপনার ব্রেকফাস্ট খাবার সঙ্গে এক টেবিল চামচ কাঁচা মধু খেয়ে নিন।
- রসুন – পাকস্থলীর আলসারে ভুগছেন, প্রতিদিনের আহারে রসুন যোগ করুন পেটের প্রদাহ থেকে আরাম পেতে।
- মরিচ– কাঁচা মরিচ আলসার প্রতিরোধ করে এবং পরিত্রাণ পেতেও সাহায্য করে। মরিচ একটি কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার যা পাকস্থলীর ভিতরের ব্যাকটেরিয়াকে নিধন করে।
- ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার – ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার হলো সেরা ঘরোয়া প্রতিকার পাকস্থলীর আলসারের চিকিৎসার জন্য। কাজুবাদাম এবং মাছের মত ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খেতে থাকুন।
- নারকেলের জল – নারকেলের জল পেট ঠাণ্ডা রাখে, বিশেষ করে যখন আপনি আলসার সংক্রমিত হন। নারিকেল পানি উপস্থিত বৈশিষ্ট্য, পেটের আরোগ্য এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে।
- নারকেল তেল – নারকেল তেলে আন্টি-ব্যাকটেরিয়া বৈশিষ্ট্য আছে যা পেটের আলসার ঘটায় এমন ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। উদ্ভিজ্জ তেল এড়িয়ে চলুন এবং আপনার খাবারের মধ্যে নারিকেল তেল ব্যবহার করুন।
- ফলের রস: ফলের রস আরও একটি ঘরোয়া প্রতিকার যা স্বাভাবিকভাবেই পেপটিক আলসার নিরাময় করে। কমলা লেবু ও আঙ্গুরের রস পান করুন।