পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS Or Polycystic ovary syndrome) আসলে একটি হরমোনজনিত ব্যাধি। পলি কথার অর্থ অনেক, পলিসিস্টিক মানে হল অনেকগুলো সিস্ট। পিসিওএসের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল জরায়ু থেকে ডিম নির্গত না হওয়া। তার পরিবর্তে যা ঘটে তা হল ডিমের চারপাশে তরল জমে সেগুলো সিস্টে পরিণত হয়।পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম যদি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হৃদরোগ এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো আরও স্বাস্থ্যগত জটিলতা হতে পারে। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন মেয়ের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম রয়েছে।
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম এর কারন
এর কোন সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। পিসিওএস (PCOS) রোগীদের ডিম্বাশয় অতিরিক্ত পরিমাণে এন্ড্রোজেন অথবা পুরুষ সেক্স হরমোন প্রস্তুত করে যেগুলি ডিম্বানু সৃষ্টিতে ভারসাম্য বিনষ্ট করে, ব্রণ সৃষ্টি হয় এবং সমগ্র শরীরে অতিরিক্ত চুল সৃষ্টি করে।শরীরে ইনসুলিন ব্যবহারের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং আপনার শরীর একটি ইনসুলিন রোধক সৃষ্টি করতে পারে। জেনেটিক্স কে মহিলাদের পিসিওডি -র কারণের মুখ্য ফ্যাক্টর হিসেবে বিচার করা হয়।
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম কোন বয়সে হয়
যে কোনো বয়সের মহিলারই মেনার্কি থেকে মেনোপজ পর্যন্ত হতে পারে। তবে একই পরিবারের মেয়েদের মধ্যে অনেকের হয় বলে জেনেটিক ফ্যাক্টরকে দায়ী করা হয়। এর তিনটে বয়সসীমা রয়েছে।
√এক, ১২-১৩ বছরের স্থূলকায় কিশোরী। এক্ষেত্রে দেখা যায়, এদের একবার পিরিয়ড হওয়ার পর আর পিরিয়ড হয়নি।
√ দুই২০-২৫ বছরের একটি দল, যাঁদের বিয়ের পর থেকেই বন্ধ্যাত্ব অর্থাৎ ইনফার্টিলিটির সমস্যা শুরু হয় এবং পাশাপাশি অনিয়মিত পিরিয়ড লক্ষ করা যায়।
√আরেকটা এজ গ্রুপ রয়েছে, যাঁরা ৩০-৩২ বছরের আশেপাশে, এদের মূল সমস্যা ওবেসিটি এবং অনিমিত পিরিয়ড। চিকিৎসকরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যাঁরা স্থূলকায়া তাঁরাই বেশি আক্রান্ত হন এই সমস্যায়। তবে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগা মহিলাদেরও পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিসিজ দেখা দিতে পারে।
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম এর লক্ষণ
- ওজন কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া ।
- ব্রণ বেরিয়ে আসা।
- সমগ্র শরীরে অতিরিক্ত চুল সৃষ্টি হওয়া । মুখে ঘন এবং কালো চুল এবং কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে পেটে ,বুকে এবং পিঠে অস্বাভাবিক ভাবে অতিরিক্ত চুল সৃষ্টি হয়।
- মাথায় চুল পাতলা হয়ে আসা।
- এমেনোরিয়া যার অর্থ হলো ঋতুস্রাব না হওয়া।
- ডিসমেনোরিয়া যার অর্থ হলো যন্ত্রণাদায়ক ঋতুস্রাব।
- অনিয়মিত ঋতুস্রাব।
- পিসিওডি(PCOD) যুক্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব দেখতে পাওয়া যায়।
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম এর ঝুঁকি
- বন্ধ্যাত্ব ।
- গর্ভাবস্থায় সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। টাইপ টু ডায়াবিটিস দেখা দেয়।
- লিভারের সমস্যা ।
- কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
- নিদ্রাহীনতা, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা।
- জরায়ু থেকে রক্তপাত ।
- অকাল জন্ম ।
- স্তন ক্যান্সার ।
- এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার ।
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম এর সমাধান কি?
উপায় মাত্র দুটি, ওজন কমানো ও হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক করা। সুষম খাদ্য ও যোগব্যায়াম এই দুই এর দ্বারাই এটা করা হল সবচেয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।একটা ব্যালান্সড উপায়ে ওজন কমানো উচিত।
১. কোনোভাবেই মিল স্কিপ করা চলবেনা, প্রধানত ব্রেকফাস্ট। কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন গুড ফ্যাট ও মরসুমি ফল যেন থাকে।
২. সারাদিনের ক্যালোরি কাউন্ট কমাতে হবে, প্রয়োজনীয় ক্যালোরির থেকে কম ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে, আবার প্রোটিনের চাহিদাও যেন মেটে সেটাও মাথায় রাখতে হবে।
৩. ভাজাভুজি যতটা সম্ভব কম খেতে হবে।
৪. সারাদিনে প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে।
৫. আমন্ড, আখরোট ইত্যাদি গুড ফ্যাট যুক্ত নাটস যোগ করতে হবে।
৬. চিনি , মিষ্টি গুড় ও মধু জাতীয় জিনিস খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
৭. প্রতিদিন একটা-দুটো কিউব ডার্ক চকলেট হরমোনাল সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে কিন্তু বেশ সাহায্য করে কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পলিফেনল।
৮. পিসিওডি থাকলে মেন্সট্রুয়াল সাইকেলের সময় হেভি ব্লিডিং হতে থাকে, যার ফলে আয়রন ডেফিসিএনসি এনিমিয়া দেখা যায়, তাই আয়রন, ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে।
৯. দারচিনি ও হলুদ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এর ওপর বেশ প্রভাব দেখা যায়।
১0.ধূমপান পরিহার করতে হবে কারণ ধূমপান আপনার শরীরে এন্ড্রোজেনের মাত্রা বাড়ায়।
অহেতুক ভয় না পেয়ে সঠিক সময়ে চিকিৎসা করান এবং প্রতিরোধ করার জন্য এসমস্ত নিয়মগুলি মেনে চলুন। অবহেলা করলে শুধুমাত্র বন্ধ্যাত্বই নয়, অন্যান্য শারীরিক জটিলতাও দেখা দিতে পারে। তাই নিজের প্রতি যত্ন নিন ও সুস্থ থাকুন।
Dietician (9 yrs experience in Maternal & Child Health) Formerly attached with Bansgarh Rural hospital , Purulia ( 2013 Feb to 2022 Apr) Bhagirothi Neotia women and child care center, Park Street, Kolkata AMRI , Chakuri, kolkata