তিসি বীজ এক ভেষজ শস্য এটি সাধারণত দু ধরনের হয় বাদামি এবং সোনালী রংয়ের, দুটোই সমপরিমাণের পুষ্টি সমৃদ্ধ। এশিয়ায় তিসি বীজ এক পুরাতন আয়ুর্বেদিক ঔষধি রূপে পরিচিত।
চলুন আজকের আলোচনায় জেনে নেই তিসি বীজের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা এবং খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে।
তিসি বীজের পুষ্টিগুণ প্রতি ১০ গ্রামে
- ক্যালোরি: 55
- জল: 7%
- শর্করা: 0.2 গ্রাম
- চর্বি: 4.3 গ্রাম
- ফাইবার: 2.8 গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: 3 গ্রাম
- প্রোটিন: 1.9 গ্রাম
তিসি বীজের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় নিউট্রেন্ট থাকে, প্রধানত:
- Fiber: তিসি বীজে উপস্থিত সলিবল ফাইবার (soluble fiber) রক্তের মধ্যে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কে কমায়।
- Omega-3 fatty acid: এটি এক ধরনের গুড ফ্যাট (good fat), যা হার্টের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- Lignans – এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রপারটিজ (Antioxidant properties) যা ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, এবং অটোইমিউন (Autoimmune) স্নায়বিক ব্যাধি হ্রাসে সাহায্য করে।
তিসি বীজে কিছু প্রয়োজনীয় প্রোটিন, মিনারেলস এবং ভিটামিনও পাওয়া যায় ।
তিসি বীজের উপকারিতা
তিসি বীজ আমাদের শরীরকে অনেক ধরনের রোগের হাত থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। যেমন:
- তিসি বীজের সলিউবেল ফাইবার আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের (Digestive system) জন্য খুবই উপকারী। এটি এক ধরনের প্রি বায়োটিক ফুড (Prebiotic food) যা আমাদের অন্ত্রে (Gut) উপস্থিত গুড ব্যাকটেরিয়ার(Good bacteria) পরিমাণকে বাড়িয়ে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- তিসি বীজে বর্তমান alpha- linolenic acid (ALA), এক ধরনের Omega-3 fatty acid, যা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আমাদের হার্টের স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে। এটি হার্টে কোন রকম ইনফ্লামেশন (Inflammation) হতে দেয় না এবং হার্টবীট (Heartbeat) কে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। Omega-3 রক্তচাপ কম করতে এবং রক্তে গুড কোলেস্টেরলের(Good cholesterol) মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, তিসি বীজে উপস্থিত lignans ব্রেস্ট ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগীদের survival chance বাড়ায়।
- ওজন কমাতেও তিসি বীজে উপস্থিত ফাইবারের ভূমিকা অনন্য। ফাইবার অনেক সময় ধরে আমাদের পেটকে ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে,যার ফলে আমাদের খিদে কম পায় এবং আমরা ক্যালরি ইনটেক (calorie intake) কম করি।
- যাদের ইনসুলিন রেজিস্টেন্স (Insulin resistance) এবং টাইপ-2 ডায়াবেটিস (Type-2 diabetes) জাতীয় অসুবিধা রয়েছে,এই পরিস্থিতিতেও তিসি বীজ এক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটি শরীরে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি (Insulin sensitivity) বাড়িয়ে রক্তে সুগারের পরিমাণকে কমায়।
তিসি বীজ খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি
কাঁচা তিসি বীজে কিছু টক্সিনের উপস্থিতি পাওয়া যায় যা হজমে বাধা সৃষ্টি করে, তাই এটিকে হালকা ড্রাই রোস্ট (Dry roast) করে খেলে এর সমস্ত উপকার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই পাওয়া যায়। ড্রাই রোস্ট করে এটিকে বছরখানেক স্টোরও (store) করা যেতে পারে। দিনে দুই টেবিল স্পুন বা কুড়িগ্রাম এর থেকে বেশি তিসি বীজ খাওয়া নির্দেশিত নয়।
নানান ভাবে আপনি এই তিসি বীজেকে আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী করে নিতে পারেন। এই তৈলাক্ত খাস্তা দানাওয়ালা তিসি বীজ অনেক রেসিপিতে ব্যবহৃত হয় এক অনন্য স্বাদ, গন্ধ ও রঙ এনে দিতে।
- তিসি তেল স্যালাড ড্রেসিং হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
- তিসি বীজের গুঁড়ো পাউডার বানিয়ে যেকোনো খাবারের সাথে ফ্লেভার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
- দই, ওটস জাতীয় খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- জলে ও দুধে মিশিয়েও খেতে পারেন।
প্রেগন্যানসি বা ব্রেস্ট ফিডিং এর সময় তিসি বীজ খাওয়া উচিত নয় বলে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যদিও এর কোনো ক্লিনিক্যাল প্রমান এখন পর্যন্ত নেই।