মেথির উপকারিতা গুলি জানা থাকলে মুক্তি পাবেন অনেক রোগ থেকে –
গ্রামবাংলার মানুষদের কাছে একটি অত্যন্ত পরিচিত খাদ্য হল মেথি। আর শুধু খাদ্য কেন ? এককথায় বলতে গেলে মেথিকে খাদ্য , মশলা, পথ্য এই সমস্ত কিছুই বলা যেতে পারে। আসলে মেথি একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন মৌসুমী গাছ যা অতি প্রাচীন কাল থেকেই সাধারণ গ্রামবাংলার মানুষদের খাদ্য তালিকায় নিজের স্থান তৈরী করে নিয়েছে। মেথি গাছের পাতা থেকে শুরু করে মেথির বীজ এই সমস্ত কিছুই আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকি। এমনকি এই মেথিকে মশলা হিসেবেও দারুণভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর করা হবে নাই বা কেন ? মেথির গুনাগুনের তালিকা এতটাই লম্বা যে তা বলে শেষ করা যাবেনা। যদি মেথির স্বাদের ব্যাপারে কথা বলতে হয় তাহলে আমরা আপনাদের জানিয়ে রাখতে চাই যে মেথির স্বাদ তেঁতো। কিন্তু মেথির মধ্যে এমনই কিছু বিশেষ বিশেষ উপাদান বর্তমান রয়েছে যেগুলির কারণে বহু যুগ থেকেই মানুষ মেথির নানাবিধ ব্যবহার নিজের দৈনন্দিন জীবনে করেই আসছে। এমনকি আপনি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা নিয়ে আগ্রহ রাখেন তাহলে আপনি জানতে পারবেন যে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাতেও মেথি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আপনাদের সাথে মেথির গুনাগুন, মেথির উপকারিতা ও মেথি ব্যবহার করার বিভিন্ন নিয়ম সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করে নেবো।
মেথি বীজের পুষ্টি গুন প্রতি ১০০ গ্রাম এ | |
এনার্জি | ৩৩৩ কিলো ক্যালরি |
প্রোটিন | ২৬.২ গ্রাম |
কারবোহাইড্রেড | ৮৮.১ গ্রাম |
ফাইবার | ৭.২ গ্রাম |
ফ্যাট | ৫.৮ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১৬০ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৩১০ মিলি গ্রাম |
আয়রন | ৬.৫ মিলি গ্রাম |
বন্ধুরা আপনারা জানলে অবাক হয়ে যাবেন যে যে মেথিকে আমরা পাঁচফোড়নের একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে থাকি তারমধ্যে স্টেরয়েড তৈরির উপাদান বর্তমান থাকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে আমাদের হাতের একেবারে কাছে থাকা এই মেথির মেডিক্যাল ইম্পর্ট্যান্স আসলেই কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আসুন আমরা একটু দেখে নেওয়ার চেষ্টা করি যে মেথি আমাদের কি কি উপকারে ( মেথির উপকারিতা ) লাগতে পারে।
মেথির উপকারিতা
১. নিয়মিত মেথি সেবন করতে পারলে আমাদের হৃদযন্ত্রের কার্যকারীতা বৃদ্ধি পায়। এরফলে হঠাৎ করে হার্ট এটাক বা হৃদযন্ত্রের অন্যকোনো সমস্যা থেকেও খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
২. মেথি ভিজিয়ে রাখা জল যদি নিয়মিত পান করা যায় তাহলে শরীরে সুগারের লেভেল নিয়ন্ত্রিত থাকে। হঠাৎ করে সুগারের লেভেল বেড়ে যায়না। যেহেতু রক্তে সুগারের লেভেল নিয়ন্ত্রণ করতেও মেথি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে তাই ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের উচিত নিয়মিত মেথি সেবন করা।
৩. আপনারা জানলে অবাক হয়ে যাবেন যে চুলের গোড়া শক্তপোক্ত করতেও মেথি একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই চুলে নিয়মিত মেথি ব্যবহার করতে পারলে অবাধে চুল পড়াও বন্ধ হয়ে যায়।
৪. মেথি বার্ধক্য দূর করতে , ব্রণের সমস্যা কমাতে , ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতেও দারুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই রূপচর্চার ক্ষেত্রেও মেথিকে খুব সহেজেই ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. মেথি আমাদের শরীরের রোগজীবাণু গুলিকে মেরে ফেলতেও দারুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত মেথি ভিজিয়ে রাখা জল পান করলে কৃমি রোগ রোধ করা সম্ভব।
তো বন্ধুরা এতক্ষন ধরে তো আমরা এটা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করলাম যে মেথি আমাদের ঠিক কি কি উপকারে লাগতে পারে। আসুন এবার আমরা একটু জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি যে মেথিকে ঠিক কিভাবে আমরা ব্যবহার করতে পারি।
মেথি কীভাবে খাবেন ?
১. রাতে এক গ্লাস জলে বেশকিছুটা মেথি ভিজিয়ে রেখে যদি প্রতিদিন সকালে সেই জল পান করা যায় তাহলেই শরীরের অনেক সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
২. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ব্রণের প্রভাব কমাতে মেথি বেটে নিয়ে পেস্ট তৈরী করুন , এরপর সেই পেস্ট মুখে লাগিয়ে ব্যবহার করতে থাকুন, দেখবেন মেথির উপকারিতা পাবেন।
৩. মেথি বাটার সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় মাখলে খুশকির সমস্যা কমে। এই মিশ্রণটি চুলের গোড়া শক্তপোক্ত করতেও সহায়ক হয়ে থাকে।
৪. ঠান্ডার সময়ে মধু , লেবুর রস এবং মেথি মিশিয়ে চিবিয়ে খেতে থাকুন। এতে জ্বরসর্দির প্রকোপ সহজেই কমে আসে। তবে মনে রাখবেন যে খুব বেশি পরিমানে মেথি খাওয়া কখনোই উচিত নয়। কারণ এতে আপনি নানারকম শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন এবং মেথির উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হবেন ।
Health And Wellness Blogger