immunity booster food in bengali

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এই কথাগুলো মেনে চললেই

মানুষ কীভাবে সুস্থ থাকতে পারে এবং কোন উপায়ে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, সেটি নিয়ে নানা গবেষণা চলছে  বিশ্বজুড়ে।এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন-যাপনের পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।শরীরে ফরেন বডি, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্যারাসাইটস ও অন্যান্য ইনফেকশনের সঙ্গে লড়াই করার জন্য ইমিউনিটিরই প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন ধরনের ইমিউনিটি মানুষের দেহের মধ্যে বিদ্যমান। যেমন শৈশব থেকেই কারোর শরীরে ইমিউনিটি তৈরি হতে পারে। আবার ভ্যাকসিনের মাধ্যমেও ইমিউনিটি আসতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেও ইমিউনিটি তৈরি হয়। কিন্তু যাদের ইমিউনিটি কম তাদের ক্ষেত্রেই ইমিউনিটি বাড়ানোর প্রসঙ্গটি আসে।

মানুষ সচরাচর যে ধরণের খাবার খায়, সেগুলো হচ্ছে – শর্করা, প্রোটিন এবং ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার।আমরা যা-ই খাই তা যদি শোষিত হয়ে শরীরের ক্ষয়পূরণ, রোগ প্রতিরোধ ও বৃদ্ধি সাধন করে, তবেই তাকে খাদ্য বলে।

ইমিউনিটি বাড়াবার জন্য কী খাবেন?

সবুজ শাকসবজি – পালংশাক, মেথিশাক, সরষেশাক ইত্যাদি সবুজ পাতা-যুক্ত সবজি রাখুন খাদ্য-তালিকায়। এগুলি আয়রন, অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগ্নেশিয়াম, কপার, ফসফেট ইত্যাদি তত্ত্বে ভরপুর।ব্রোকোলি ভিটামিন সি, অ্যান্টি ক্যান্সার কম্পোনেন্ট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই সবজি শরীরের জন্য দারুণ উপকারী।

ভিটামিন সি – কমলালেবু, আমলকী, পাতিলেবু, কিউযি, পেয়ারা, ব্রোকোলি, পালংশাক ইত্যাদি ফল ও সবজি ভিটামিন সি-তে ভরপুর। শরীর সুস্থ রাখতে ভিটামিন সি খাওয়া খুবই জরুরি। এগুলো ইমিউনিটি শক্তি বাড়ায় এবং অসুখের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা প্রদান করে।

Fruit Juice Nutrition bangla

ভিটামিন এ – কমলা বা লাল রঙের ফল আর সবজি যেমন পেঁপে, গাজর, রাঙাআলু, তরমুজ, লাল আঙুর, আম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। এটা আমাদের ইমিউনিটি  বাড়াতে সাহায্য করে।

ক্যালসিয়াম – হাড় শক্ত করতেই যে শুধু দরকার ক্যালসিয়ামের এমন নয়, শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। দুধ, দই, ঘি, ছানা, চিজ, ছাছ, ভিন্ডি, পালং, ব্রোকোলি, বিনস এবং ফলের মধ্যে কমলালেবু, কিউইয়ি, ব্ল্যাকবেরি, পেঁপে ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে।

প্রোটিন – এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকে প্রাপ্ত জিংক, সেলেনিয়াম, ভিটামিন এ, ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও কার্যকর রাখতে সাহায্য করে। মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম প্রোটিনের ভালো উৎস। বাদাম থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ই শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ও ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে। দুধ ও দই থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ডি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়াও দই থেকে প্রাপ্ত প্রোবায়োটিকও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করায় সাহায্য করে।

জিঙ্ক – শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি হলে রক্তে শ্বেতকণিকার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। বাদাম, শিম, দুগ্ধজাত পণ্যে জিঙ্কের পরিমাণ বেশি থাকে।

হলুদ – রান্নাঘরের নিত্য প্রয়োজনীয় উপকরণের অন্যতম হলুদ। এর মধ্যে সারকিউমিন (curcumin) বলে এক ধরনের পদার্থ থাকে। এই পদার্থের কারণে হলুদে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি (anti-inflammatory) ও অ্যান্টিভাইরাল (anti-viral) কার্যকারিতা রয়েছে। তাই হলুদ গুঁড়ো দুধে মিশিয়ে সঙ্গে মধু দিয়ে খেতে পারেন

Tiranga vegetables

রসুন – এই সবজিটি শরীরে দারুণ উপকারী কিছু এনজাইম প্রবেশ করায়। সাধারণত কুচি করে বা বেটেই এই সবজি রান্নায় দেওয়া হয়। কিন্তু রসুন কখনো কেটেই রান্নায় দিয়ে দেবেন না। অন্তত কেটে রাখার পর ধুয়ে ১০ মিনিট বাতাসে রেখে তার পর রান্নায় দিন।

অঙ্কুরিত বীজ – এতে প্রোটিন, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, মাঙ্গানিজ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফোলেট  উচ্চমাত্রায় থাকে। মানুষ নিজ দেহে তৈরি করতে পারে ১১টি এমিনো এসিড, আর খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয় ৯টি এমিনো এসিড, যার সবগুলিই অঙ্কুরিত বীজে থাকে।

মৌরি – মৌরি বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে সহায়তা করে। মৌরির পানি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং প্রদাহ হ্রাস করতেও সহায়তা করে। এটি সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং শ্বাসযন্ত্রের পথ পরিষ্কার করতেও সহায়ক। মৌরি ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং বিটা ক্যারোটিনের অন্যতম উৎস।

শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর অন্যতম উপায় সঠিক খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা। নিয়মিত যোগাসন ও অ্যারোবিক এক্সারসাইজ করলে শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ কমে। আসলে দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজকর্ম ও দুশ্চিন্তার ফলে আমাদের শরীরের স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই স্ট্রেস হরমোন আবার ইমিউনিটি কমিয়ে দেয়। তাই প্রতিদিনের খাবারের দিকে নজর দিতে হবে সবাইকে। এমন কোনো খাবার খাওয়া যাবে না যা শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে। আবার খাবারের সবচেয়ে বেশি গুণ শরীরে প্রবেশ করতে পারে এমন ভাবে খাবারও খেতে হবে। খাবারগুলোকে সঠিক পদ্ধতিতে রান্না করতে হবে। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

You cannot copy content of this page

Scroll to Top