World Aids Day 2022 in bengali

বিশ্ব এইডস দিবস ২০২২ – এইডস সম্পর্কে জানুন এবং সতর্ক থাকুন

বিশ্ব এইডস দিবস হল একটি আন্তর্জাতিক দিবস। ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর ১লা ডিসেম্বর দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।এইচআইভি সংক্রমণের জন্য এইডস মহামারী ছড়িয়ে পড়ার বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং যারা এই রোগে মারা গেছেন তাদের প্রতি শোক পালন করতে এই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সরকারী ও স্বাস্থ্য আধিকারিকগণ, বেসরকারী সংস্থাগুলি এবং বিশ্বে বিভিন্ন ব্যক্তি, এইডস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সকলকে সচেতন করতে এই দিনটি পালন করে।

বর্তমান বিশ্বে এইডস একটি মারাত্মক ঘাতক ব্যাধি হিসেবে পরিচিত। 1981 সালে রােগটি আবিষ্কৃত হয়। Acquired Immune Deficiency Syndrome-এর শব্দগুলাের আদ্যক্ষর দিয়ে এ রােগটির নামকরণ (AIDS) করা হয়েছে। UNAIDS-এর এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে সারা বিশ্বে বর্তমানে প্রায় 2 কোটি 30 লাখের বেশি লােক AIDS-এর জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রায় 40 শতাংশ হলাে নারী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রায় 164টি দেশে এই রােগের বিস্তার ঘটেছে। Human Immune Deficiency Virus সংক্ষেপে HIV ভাইরাসের আক্রমণে এইডস হয়।

এইডস কি?

এইডস এর পুরো নাম হল ‘অ্যাকুয়ার্ড‌ ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিন্ড্রোম’ এবং এই রোগ এইচআইভি-পজিটিভ। এটি একটি ভাইরাস । এই ভাইরাস মানুষের রোগ প্রতিরক্ষা সিস্টেমকে দুর্বল করে।শরীরের ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস প্রতিরক্ষা ক্ষমতা হারাতে শুরু করে। যার ফলে শরীরের রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। শরীরের প্রতিরোধের ক্ষমতা  আট বা দশ বছর হ্রাস করা হয়। এই অবস্থাকে শুধুমাত্র এইডস বলা হয়। এইডস ভাইরাসটিকে রেট্রোভাইরাস বলা হয়।

এইডস এর লক্ষণ

এইচআইভি / HIV প্রাথমিক পর্যায়ে এটি বোঝা যায় না এবং এক্ষেত্রে মানুষ চিকিৎসার দেরি হয়ে যায়।

1.ক্লান্তি

যদি একজন ব্যক্তি ইতিমধ্যেই ক্লান্তি অনুভব করেন বা সবসময় ক্লান্তি অনুভব করেন তবে তাকে এটিকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা উচিত এবং এইচআইভি পরীক্ষা করা উচিত।

2.পেশী প্রসারণ

কঠিন শারীরিক কাজ না করেই আপনার পেশীতে যদি সবসময় ব্যথা এবং অস্বস্তি হয়, সুতরাং এটাকে অবহেলা করা যাবে না। এটি এইচআইভি এর একটি লক্ষণ হতে পারে।

3.জয়েন্টগুলোতে ব্যথা এবং ফোলা ভাব

বয়সের জন্য জয়েন্টগুলোতে ব্যথা এবং ফোলা ভাব স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়, তবে এটি যদি আগেই নির্দিষ্ট বয়সের আগেই ঘটে তবে চিন্তা করার প্রয়োজন আছে। কারন এটি এইচআইভির একটি লক্ষণ হতে পারে।

4.মাথা ব্যথা

যদি মাথা সবসময় ব্যথা থাকে, যদি এই ব্যথা সকালে কমে তবে এটি এইচআইভির লক্ষণ হতে পারে।

5.ওজন কমে যাওয়া

এইচআইভি রোগীর ওজন প্রতিদিন কিছুটা হ্রাস পায়। এই বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিৎ।

6.ত্বকের উপর কোনো চিহ্ন

কম অনাক্রম্যতা এবং অনাক্রম্য শক্তির কারণে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এটা ত্বকের উপরে প্রভাবিত করে। ত্বকে লাল ফুসকুড়ি এবং সেটা নিরাময় না এইডস এর একটি লক্ষণ।

7.গলা শুকিয়ে যাওয়া

যদি আপনি প্রচুর পরিমাণে জলপান করার পরও গলা ভেঙে থাকে ,তবে এটি এইচআইভির লক্ষণগুলি হিসেবে ভাবা যেতে পারে।

8.শুকনো কাশি এবং বমি বমি ভাব

ক্রমাগত কাশি হচ্ছে কিন্তু সেই কাশিতে রক্ত নেই। সর্বদা মুখব্যথাইত্যাদি এইচআইভির লক্ষণ হতে পারে। এই সঙ্গে, খাবার খাওয়ার পরে অবিলম্বে বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া শরীরের এইচআইভি সংক্রমণকে নির্দেশ করে।

9.ক্রমাগত ঠাণ্ডা লাগা

ঠান্ডা লাগা স্বাভাবিক, কিন্তু যদি উপযুক্ত আবহাওয়াতেও ঠান্ডা থাকলে এটি এইচআইভির লক্ষণ হতে পারে।

10.নারীদের ক্ষেত্রে নজর রাখতে হবে মেন্সট্রুয়াল সাইকেলের দিকে। স্বাভাবিকের তুলনায় যদি রক্তক্ষরণ কম হতে থাকে বেশ কিছুদিন ধরে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।

Condoms

এইডস রােগের কারণ

নিম্নলিখিত কারণে একজন সুস্থ ব্যক্তি এই  রােগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। 

1. এইডস আক্রান্ত পুরুষ বা মহিলার সাথে অনিরাপদ যৌনমিলনের মাধ্যমে এ রােগ হয়।

2.দুর্ঘটনাজনিত রক্তক্ষরণ, প্রসবজনিত রক্তক্ষরণ, বড় অস্ত্রোপচার, রক্তশূন্যতা, থ্যালাসেমিয়া, ক্যান্সার ইত্যাদি ক্ষেত্রে দেহে রক্ত পরিসঞ্চালন প্রয়ােজন হয়। এ অবস্থায় এইডস রােগে আক্রান্ত রােগীর রক্ত সুস্থ ব্যক্তির দেহে সঞ্চালন করলে এইডস রােগ হয়।

3.এইডসে আক্রান্ত বাবা থেকে সরাসরি সন্তানে রােগটি ছড়ায় না। বাবার সাথে যৌনমিলনের মাধ্যমে মায়ের এইডস হতে পারে এবং আক্রান্ত মায়ের গর্ভের সন্তান তখন এইডস রােগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রােগে আক্রান্ত মায়ের দুধ শিশু পান করলে সে শিশুও এইডসে আক্রান্ত হতে পারে।

4.HIV জীবাণুযুক্ত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, সুচ, দন্ত চিকিৎসার যন্ত্রপাতি এবং অপারেশনের যন্ত্রপাতির ব্যবহারের মাধ্যমেও সুস্থ ব্যক্তি এ রােগে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি সেলুনে একই ব্লেড একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করলে তার মাধ্যমেও রােগটি ছড়াতে পারে।

5.এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির কোনাে অঙ্গ অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে এ রােগ সংক্রমিত হয়।

এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে করণীয়

এইচআইভি সংক্রমণ কিভাবে হয়, সে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এইডস প্রতিরোধ করতে হবে। এইডস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারেঃ

  1. কোন কারণে রক্ত গ্রহণের প্রয়োজন হলে রক্তদাতার রক্তে এইচআইভি আছে কি না সেটা অবশ্যই পরীক্ষা করে নিতে হবে।

2.যৌনসঙ্গী নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে এবং মিলনের আগে খোলাখুলি কথা বলে নিরাপত্তার ব্যপারে নিশ্চিত হতে হবে।

3.অনিরাপদ যৌনমিলনের সময় অবশ্যই কনডম ব্যবহার করতে হবে।

4.যেকোনো যৌনরোগে আক্রান্ত হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

5.প্রতিবারই ইনজেকশনের নতুন সূঁচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।

6.এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের ক্ষেত্রে, সন্তান গ্রহণ, গর্ভাবস্থা, প্রসব এবং সন্তানকে বুকের দুধ দেয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

এইডস কিভাবে ছড়ায়

বাতাস, জল, খাবার কিংবা স্পর্শের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ায় না। সাধারনত এইচআইভি মানবদেহের কয়েকটি নির্দিষ্ট তরল পদার্থের (রক্ত, বীর্য ও বুকের দুধ) মাধ্যমেই ছড়ায়। সুনির্দিষ্টভাবে নিম্নলিখিত কিছু উপায়ে এইচআইভি ছড়াতে পারেঃ

1.এইচ.আই.ভি. তে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে অথবা তার ব্যবহৃত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বা সূঁচ ব্যবহার করলে।

2.এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত সুস্থ্য ব্যক্তির দেহে পরিসঞ্চালন করলে।

3.আক্রান্ত ব্যাক্তি কতৃক ব্যবহৃত সুচ অথবা সিরিঞ্জ অন্য কোন ব্যাক্তি ব্যবহার করলে।

4.আক্রান্ত ব্যক্তির কোন অঙ্গ অন্য কোন সুস্থ্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে।

5.এইচ.আই.ভি. তে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের শিশুরও এইডস এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা গর্ভধারণের শেষদিকে অথবা প্রসবের সময় হতে পারে। তবে জিডোভুডিন নামক ওষুধ ব্যবহার করে এই সম্ভাবনা কিছুটা কমানো যেতে পারে।

6.অনিরাপদ দৈহিক মিলনের ফলে অর্থাৎ এইচ.আই.ভি. তে আক্রান্ত কারো সাথে কনডম ব্যবহার না করে যৌন সম্পর্ক করলে।

এইচআইভি কোন কোন উপায়ে ছড়ায় না

1.বাতাস, পানি, খাবার এবং স্পর্শের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ায় না।

2.আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে একই প্লেটে খাবার খেলে এইচআইভি ছড়ায় না।

3.আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা করলে এইচআইভি ছড়ায় না।

4একই বিছানা ব্যবহার কিংবা একই পোশাক পরিধান করলেও এইচআইভি ছড়ায় না।

5.আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি থেকে এইচআইভি ছড়ায় না।

6. মশা কিংবা অন্য কোনো পোকা-মাকড়ের কামড়ের মাধ্যমেও এইডস ছড়ায় না।

এইডস’এ আক্রান্ত ব্যাক্তির পরিচর্যা

এইডস যেহেতু একটি মরণব্যাধি আবার একজন এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অতি সহজেই অন্যকে সংক্রমিত করে না। তাই, এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আমাদের সামজ থেকে যেন বিচ্ছিন্ন না করে তাকে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে সাহায্য করতে হবে। যেমন-

1..অক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই সে তার কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে না। তাই তাকে স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করায় উৎসাহিত করতে হবে।

2.এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ ও সৌহার্দ্যমুলক আচরণ করতে হবে।

3.তাদেরকে মানসিকভাবে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করতে হবে।

4. তাদের প্রতি ভাল ব্যবহার করতে হবে এবং যত্নবান হতে হবে।

5.এইচআইভি অক্রান্তদের তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে বঞ্চিত না করা।

6. প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Shopping Cart

You cannot copy content of this page