Diabetes

ডায়াবেটিস কী ? ডায়াবেটিস এর প্রকার,এর লক্ষন এবং চিকিৎসা

ডায়াবেটিস  হল একটি দীর্ঘকালীন শারীরিক অবস্থা যেখানে  আমাদের দেহে সঠিকভাবে ইন্সুলিন উৎপাদন হয় না অথবা উৎপাদিত ইন্সুলিন কে শরীর ঠিকঠাক মতো ব্যবহার করতে পারে না ।

দৈনন্দিন জীবনে বেঁচে থাকা এবং সঠিকভাবে কাজকর্ম চালিয়ে যেতে গেলে প্রয়োজন শক্তির । আর আমাদের শক্তির চাহিদার বেশীর ভাগই পুরন করে শর্করা ( Carbohydrate ) । হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যে উপস্থিত শর্করা গ্লকুজে পরিনত হয় এবং সেই গ্লকুজ রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয় সারা দেহে পৌছায় এবং সেখান থেকে ইন্সুলিন হরমোনের সহায়তায় গ্লকুজ কোষে প্রবেশ করে । এখন কনও কারনবসত যদি ইন্সুলিনের ক্ষরণ বাধা প্রাপ্ত হয় অথবা আমাদের শরীর ইন্সুলিন কে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে না পারে তখন রক্তে  গ্লকুজ ( শর্করা ) এর পরিমান বেড়ে গিয়ে যে শারীরিক অবস্থার সৃষ্টি করে তাকে ডায়াবেটিস  মেলিটাস বা মধুমেহ বলা হয় । ২০০৬ এর ২০ ডিসেম্বর ডায়াবেটিস কে  জাতিসংঘ বিশ্বের দীর্ঘ মেয়াদি ও ব্যয়বহুল ব্যধি বলে চিহ্নিত করেন ।

ডায়াবেটিস এর রিস্ক ফ্যাক্টর

  • বংশগত/জেনেটিক কারন ।
  • বয়স ।
  • অবেসেটি বা অতিরিক্ত ওজন।
  • মানসিক চাপ ।
  • অলস জীবন যাপন ( Sedentary Lifestyle )

কিভাবে জানবেন আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে কি না ?

ল্যাবরেটরি তে রক্ত পরীক্ষা করার মাধ্যমে আপনি রক্তে সুগারের মাত্রা জানতে পারেন । খাবার খাওয়ার আগে ( Fasting ) রক্তে সুগারের মাত্রা যদি  ৭০ – ৯৯ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এর মধ্যে হয় তাহলে আপনার রক্তে গ্লকুজের মাত্রা নরমাল রয়েছে , রক্তে গ্লকুজের মাত্রা যদি  ১০০-১২৫ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার  এর মধ্যে হয়ে তাহলে আপনার ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা রয়েছে অর্থাৎ আপনি প্রি-ডায়াবেটিক স্টেজে আছেন । আর রক্ত টেস্ট করার পর যদি আপনি গ্লকুজের মাত্রা ১২৬  মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার  এর বেশী দেখতে পান তাহলে আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে বলে ধরে নিতে পারেন।

Blood Glucose Test ( Fasting )
Below 70 mg/dlHypoglycemia
70-99 mg/dlNormal
100-125 mg/dlPrediabetes
125 mg/dl and aboveDiabetes

বিভিন্ন প্রকারের ডায়াবেটিস 

বিভিন্ন প্রকারের ডায়াবেটিস  রয়েছে যেমন –

  • টাইপ – ১ ডায়াবেটিস বা ইন্সুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস ।
  • টাইপ – ২ ডায়াবেটিস  বা নন-ইন্সুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস ।
  • গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস

টাইপ – ১ ডায়াবেটিস বা ইন্সুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস 

এটি শিশু এবং কিশোর বয়সীদের খেত্রে বেশি দেখা যায় , তবে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যেও টাইপ -১ ডায়াবেটিস হয় । এই রকমের ডায়াবেটিস এ অগ্নাশয়ের বিটা কোষ থেকে খুব কম পরিমানে ইন্সুলিন ক্ষরণ হয় অথবা একদম হয় না । সেই কারনে রক্তে শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রন করতে টাইপ -১ ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন ইন্সুলিন ইঞ্জেকশনের দরকার হয় । 

টাইপ – ২ ডায়াবেটিস  বা নন-ইন্সুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস 

 সাধারনত অতিরিক্ত ওজন সম্পন্ন ব্যক্তি ( Overweight Or Obese Person  ) এবং ৪০ বছর বয়েসের পর এই রকমের ডায়াবেটিস দেখা দেয় । এই রকমের ডায়াবেটিস এ অগ্নাশয়ের বিটা কোষ থেকে ইন্সুলিন ক্ষরণ নরমাল থাকে বরং কখনো কখনো বেশি থাকে । 

গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস 

ডায়াবেটিস

যখন গর্ভবতী মহিলা ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হন তখন একে  গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বলা হয় । এটি সুধুমাত্র শতকরা ১% গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় । 

ডায়াবেটিস এর লক্ষন 

  • রাতে  বার বার প্রস্রাবের বেগ আসা ।
  • ওজন কমতে থাকা ।
  • মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা হওয়া ।
  • ঘনঘন খুদা লাগা এবং ক্লান্তি অনুভব করা ।
  • মুখ শুকিয়ে জাওয়া ।
  • ঘনঘন পিপাসা লাগা ।
  • মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া।
  • মনঃসংযোগের অভাব দেখা দেওয়া ।
  • একটুতেই উত্তেজিত হওয়া বা মন খারাপ হয়ে যাওয়া ।
  • চোখের দৃষ্টি শক্তি কমতে থাকা ।
  • ভাজাইনাল ইনফেকশন ।

আরও পড়ুন – ডায়াবেটিসের ৫টি সেরা খাবার জেনে নেওয়া আবশ্যক

চিকিৎসার উপায় 

সাধারনত তিনটি উপায় একত্রে মেনে চললেই আপনি ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারবেন –

  • সঠিক খাদ্যভ্যাস ( ডায়েট )।
  • ব্যায়াম ।
  • মেডিকেশন।

ডায়াবেটিসে সঠিক খাদ্যভ্যাস করতে এই গাইডলাইন মেনে চলুন 

  • ডায়াবেটিস হলে সুস্থতা বজায় রাখার জন্য আপনার খাবার দাবারের পরিবর্তন আনা গুরুত্বপূর্ণ । ডায়াবেটিস রোগীদের কম কার্বোহাইড্রেট, হাই ফাইবার , উচ্চ প্রোটিন এবং মোডারেট ফ্যাট  জাতীয় খাবার খেতে বলা হয় যা ব্যাক্তি বিশেষ ভিন্ন ভিন্ন হয় ।
  • রোগীর যদি হাই প্রেসার থাকে তাহলে খাবার রান্না করার সময় লবনের পরিমান কম (৪-৫ গ্রাম/প্রতিদিন ) করা প্রয়োজন । খাবার খাওয়ার সময় যেন আলাদা করে লবন না নেওয়া হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । এমনকি যে খাবার গুলতে লবনের (সোডিয়াম ) পরিমান বেশী সেই খাবার গুলো যেমন আঁচার,পাপর,প্রসেসড খাবার, বেকিং সোডা ,অজিনোমটো কে বাদ দেওয়া প্রয়োজন ।
  • খাবারে অতিরিক্ত ফ্যাট বা তেল আপনার হার্টের স্বাস্থ্য খারাপ করে ভিভিন্ন হৃদরোগে আক্রান্ত করতে পারে তাই আপনাকে ভালো ফ্যাট বা তেলের উৎসকেই বেছে নিতে হবে । স্যাচুরেটেড ফ্যাটস শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমান বাড়িয়ে দেয় । পলি আন স্যাচুরেটেড ( অমেগা ৩ ও ৬ ) এবং মনো আন স্যাচুরেটেড ফ্যাটস আমাদের শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমান বাড়াতে সাহায্য করে যা সর্বোপরি আমাদের হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে । সূর্যমুখী তেল, কর্ণ অয়েল , সয়াবিন তেল, ফ্লেক্সসিড তেল, ওয়ালনাট, মাছ এগুলোতে পলি আন স্যাচুরেটেড ফ্যাট ভালো মাত্রায় পাওয়া যায় । সপ্তাহে ২-৩ বার মাছ খেলে প্রয়োজনীয়  অমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় । তাছাড়া আপনি উদ্ভিদজাত অমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এর জন্য চায়া সিড, ফ্লেক্সসিড , অয়ালনাট  ইত্যাদির উপর নির্ভর করা যায় । মনো আন স্যাচুরেটেড ফ্যাটস এর জন্য বাদাম তেল, কাঠ বাদাম ( আল্মন্ড ) ইত্যাদির উপর নির্ভর করা যায় ।
  • খাবারে প্রতিদিন ২০-২৫ গ্রাম ফাইবার থাকা প্রয়োজন , এই ফাইবার আপানার রক্তে গ্লকুজের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে করতে সাহায্য করবে, রক্তচাপ নরমাল রাখতে সাহায্য করবে, কোলেস্টেরল কম রাখতে সাহায্য করবে এবং আপনার ওজন কেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে ।
  •  উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত খাবার কে বাদ দিন এবং কম গ্লাইসেমিক খাবার  কে প্রাধান্য দিন ( গ্লাইসেমিক ইনডেক্স নিয়ে জানতে এখানে ক্লিক করুন ) । কারন কম গ্ল্যাইসেমিক খাবার আপনার রক্তে গ্লকুজে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে ।

কী খাবেন কী খাবেন না 
খাদ্য তালিকাপ্রতিদিন খাওয়া যাবেমাঝে মাঝে খাওয়া যাবেখাওয়া যাবে না 
খাদ্যশস্যআটার পাস্তা, ব্রাউন  রাইস/রেড রাইস, হাই ফাইবার খাদ্যশস্য, জোয়ার, বাজরা, রাই, মাল্টিগ্রেন আটা, আটা, হোয়াইট রাইস ( ভাত )ময়দা এবং ময়দা জাতীয় খাবার ।
ডালসব রকমের ডাল যেমন মুসুর ডাল, মুগ ডাল, মটর, ছোলা, রাজমা, ইত্যাদি ।
সবুজ শাকসবজিসব রকমের সবুজ শাকসবজি 
অন্যান্য সবজিসব রকমের সবজি বিট, আলু,গাজর,মিষ্টী আলু,ক্যানেড সবজি
দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবারস্কিমড মিল্ক ( ০.৫-১% ), কম চর্বি যুক্ত দই এবং বাটার মিল্ক নরমাল দুধ,দই,চিজ, আইসক্রিম 
মাছ, মাংস এবং পোলট্রিডিমের সাদা অন্স,স্কিনলেস চিকেন,মাছচর্বিহীন মাংসডিমের কুসুম, ভাজা মাংস, শূয়রের মাংস, স্কিন যুক্ত মুরগির মাংস, ভাজা মাছ, অরগান মিট এবং রেড মিট 
ফলআপেল, সাইট্রাস ফল, পেঁপে, পেয়ারা, জাম, নাসপাতি ডালিম, খরবুজ, আনারস, তাজা ডমুরড্রাই ফল ,কেনেড ফল, আম, কাঁঠাল, সাপোতা ফল, মাখন ফল, আতা , আঙ্গুর, পাকা কলা ইত্যাদি ।
ফ্যাট এবং তেলঅলিভ অয়েল, ভেজিটেবল অয়েল যেমন সূর্যমুখী তেল, কুসুম ফুল তেল, রাইসব্রান অয়েল, বাদাম তেল, সয়াবিন তেল মাখন, ঘি, ডালডা, নারকেল তেল, বানস্পতি তেল, পাম অয়েল ।
পানীয় চা, সবুজ চা, লেবু জল, সুপকফি, ফলের রসমদ, কারবনেট অয়াটার, সফট ড্রিঙ্ক , চিনি দেওয়া ফলের রস 
লবন৫ গ্রাম রান্নার সময়পাতে লবনআঁচার, পাঁপড়, লবনাক্ত বিস্কুট , চিপস, ড্রাই ফিস ।
বাদামআল্মন্ড, অয়ালনাটচিনি বাদাম, নারকোলপিস্তা বাদাম, কাজু বাদাম
অন্যান্যফ্লেক্স সিড, চিয়া সিডচিনি, গুঁড়, মধু, মিষ্টি, চকোলেট, বেকারী, চুইং গাম ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

You cannot copy content of this page