lpid profile

হাইপারলিপেডেমিয়া এর কারন লক্ষণ এবং প্রতিকার

আমাদের রক্তে যখন লিপিড বা ফ্যাট ( চর্বি ) এর পরিমান বেড়ে যায় তখন তাকে  হাইপারলিপেডেমিয়া বলা হয় । খাবার হজম এবং ভিভিন্ন হরমোন উৎপাদনের জন্য আমাদের লিভার  কোলেস্টেরল তৈরি করে , যা আমাদের জন্য যথেষ্ট । কিন্তু আমরা প্রতিদিন কিছু খাবার দাবারের মাধ্যমে ( বিশেষত খাবারের প্রাণীজ উৎস যেমন দুধ ,ঘি, মাখন, মাংস, ডিম ইত্যাদি ) আরও কিছু কোলেস্টেরল গ্রহন করে নেই , যেগুলো আমাদের দেহের জন্য অতিরিক্ত হয়ে যায় । 

রক্তে মোট কোলেস্টেরলের  মাত্রা ২০০ মিলিগ্রাম /ডেসিলিটার এর কম থাকলে স্বাভাবিক এবং ২৪০ মিলিগ্রাম / ডেসিলিটার এর বেশী থাকলে অস্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয় । আর রক্তে যখন ২৪০ মিলিগ্রাম / ডেসিলিটার এর বেশী থাকে তখন ধমনীর দেওয়ালে কোলেস্টেরল জমতে শুরু করে যাকে এথেরোস্ক্লেরোসিস বলা হয় ।

হাইপারলিপেডেমিয়া  এর কারন 

সব রকমের কোলেস্টেরল ক্ষতিকর হয় না  কিছু  কোলেস্টেরল ( HDL )  উপকারি  যা আমাদের শরীরের জন্য ভালো, আবার কিছু কোলেস্টেরল ( LDL, ট্রাইগ্লিসারাইড ) আমাদের শরীরের জন্য অপকারি । যখন আমাদের রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের থেকে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় তখনই এই সমস্যার সুত্রপাত হয় । কিছু খারাপ অভ্যাস এবং খাবারদাবার ( বিশেষত যে খাবারে কোলেস্টেরল , বেশী স্যাচুরেটেড ফ্যাট,  ট্রান্স ফ্যাট থাকে ) খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী থাকে । এর মধ্যে কিছু হল – 

  • রেড মিট ( মাংস )
  • তেলেভাঁজা , ফাস্টফুড ।
  • আইস্ক্রিম ।
  • ডিমের কুসুম ।
  • চিজ , মাখন , ঘি , বনস্পতি তেল ।
  • শারীরিক পরিশ্রম না করে একদম বসে থাকা ।
  • ধূমপান ।
  • মদ্যপান 
  • লিভারের অসুখ ।

হাইপারলিপেডেমিয়ার লক্ষণ এবং ফলাফল

কনও ব্যক্তির হাইপারলিপেডেমিয়া হয়েছে কিনা তা এত সহজে বঝার মতো নয় , তবে  এটা হলে ব্যক্তির  ধমনীর দেওয়ালে কোলেস্টেরল ( এথেরোস্ক্লেরোসিস )  জমা হয় , করনারি হার্ট ডিজিজ হয় , তাছাড়া 

  • বুক ব্যাথা ।
  • শ্বাসকষ্ট ।
  • মাথা ঘোরা ।
  • উচ্চ রক্তচাপ ।
  • হাত পা ফুলে যাওয়া ।
  • ক্ষত শুকাতে বেশী সময় লাগে ।
  • ত্বক বিবর্ণ হয়ে যাওয়া ।
  • প্যানক্রিয়াটাইটিস হবার সম্ভাবনা থাকে ।
omega 3 sources

হাইপারলিপেডেমিয়ায় ডায়েট

রক্তে লিপিড বা ফ্যাট এর স্বাভাবিক বজায় রাখাই হল হাইপারলিপেডেমিয়া থেকে রক্ষ্যা পাবার উপায় । এর জন্য খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট , কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করা প্রয়োজন যা রক্তে LDL এবং ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা কম করে ।

  • খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনের জন্য উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার যেমন পাঠার মাংস , শুকরের মাংস সসেজ, ভেড়ার মাংস, মুরগির মাংস, ডিম ( হলুদ কুসুম ), মস্তিষ্ক, লিভার এবং কিডনি, আইসক্রিম, মাখন, দেশি ঘি খাওয়াতেও নিয়ন্ত্রন আনতে হবে ।

Highlights – কোলেস্টেরল শুধু মাত্র প্রানীজ খাবারে পাওয়া যায় , এটি কখনো উদ্ভিজ খাবার, তেল বা ফ্যাট এ পাওয়া যায় না । তাই যারা উদ্ভিদ খাবার বেশি খান এবং প্রানীজ খাবার কম খান তাদের কোলেস্টেরল এর সমস্যা কম হয় ।

  • প্রতিদিনের খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট  কম ( প্রতিদিন মোট ক্যালোরির ১০% এর নিচে )  করা প্রয়োজন , আর  স্যাচুরেটেড ফ্যাটও বেশির ভাগ প্রাণীজ উৎসেই পাওয়া যায় । তাছাড়া পাম অয়েল ,নারকেল তেল ,বনস্পতির তেলেও বেশী স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে ।
  • মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি  অ্যাসিড  ( MUFA ) এবং পলি  আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি  অ্যাসিড [ ( PUFA ) অমেগা 6 ও অমেগা 3 ফ্যাটি  অ্যাসিড ]  বেশী  পাওয়া যায় এমন তেল কে ফ্যাটের উৎস হিসেবে নির্বাচন করা প্রয়োজন , কারন এগুলো খারাপ কোলেস্টেরল ( LDL ) কে কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল ( HDL ) কে বাড়াতে সাহায্য করে । এর মধ্যে কিছু উদাহরন হল অলিভ অয়েল , সরষে তেল , বাদাম তেল, সূর্যমুখী, তিল, ভুট্টা তেল , সয়াবিন তেল , মাছের তেল ( ফিস অয়েল )
  • প্রতিদিন  ৪০ গ্রাম ফাইবার জাতীয় খাবার হাইপারলিপেডেমিয়া রোগীর জন্য উপকারি কারন ফাইবার খারাপ কোলেস্টেরল কম করতে সহায়তা  করে । 
  • ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার যেমন বিস্কিট, কেক , নুডলস , সিঙ্গারা , লুচি , পাউরুটি না খাওয়া ভালো , প্রয়োজনে আটা দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়া প্রয়োজন ।
  • ফল এবং শুকনো ফল খাওয়া যায় , তবে ফলের সঙ্গে কোনও  ক্রিম যাতে মেশানো না হয় , এটা খেয়াল রাখা প্রয়োজন ।
  • ধূমপান এবং মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করা ভালো অথবা সীমিত করা প্রয়োজন ।
  • প্রতিদিন কিছু সময় ব্যায়াম অথবা শারীরিক শ্রম রক্তে কোলেস্টেরল জমা থেকে রক্ষা করে ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

You cannot copy content of this page