স্বাধীনতা দিবসের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে পুরো দেশ জুড়ে চলছে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’। তেরঙার সাজে সেজে উঠেছে গোটা দেশ। খাবারের থালাতেও থাকুক সেই রং এর ছোঁয়া ।তাই আজকের আলোচনায় রইল তিন রঙের শাক সবজি ফলের গুরুত্ব আর কিছু বিশেষ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে খাবারের রেসিপি ।
ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনি যে বেশি করে সবুজ ও রঙিন ফল এবং শাকসবজি খেতে হবে।কোন খাবারই সাধারণত আমরা শুধু মাত্র পেট ভরার জন্য খাই না। খাবার খাওয়ার পিছনে এক বিশেষ উদ্দেশ্য থাকে। বেশিরভাগ মানুষই পর্যাপ্ত পরিমাণ ফল ও সবজি গ্রহণ করে না এবং রঙিন ফল ও সবজির উপকারিতা সম্পর্কে অবগত নয়।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ২২০ গ্রাম সবজির প্রয়োজন। পুষ্টিবিদদের মতে, সুস্থ সবল দেহের জন্য দৈনিক জনপ্রতি ১১৫ গ্রাম ফল খাওয়া দরকার। তা যোগান দেয়া সম্ভব না হলে কমপক্ষে ৬০ গ্রাম ফল খাওয়া বাঞ্ছনীয়।আর খাদ্য উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপাদান হচ্ছে ভিটামিন ও মিনারেলস।এই ভিটামিন ও মিনারেলসর এক অন্যান্য উৎস হলো শাকসবজি এবং ফলমূল।তাই আমরা আমাদের শরীরের প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে, শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে, শরীরের ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা মেটাতে শাকসবজি এবং ফলমূল খেয়ে থাকি।ফল এবং শাকসবজির প্রতিটি রঙ নির্দিষ্ট ফাইটোনিট্রিয়েন্টগুলির কারণে ঘটে যা প্রাকৃতিক রাসায়নিক পদার্থ। এটি উদ্ভিদকে জীবাণু, রোগ, সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি এবং অন্যান্য হুমকির হাত থেকে রক্ষা করে। প্রতিটি রঙ নির্দিষ্ট পুষ্টি প্রচুর পরিমাণে নির্দেশ করে।
লাল,কমলা ও হলুদ রঙের ফলমূল ও শাকসবজিঃ (হলুদ কমলা হৃদয় ভালো রাখে)
●হলুদ ও কমলা ফল যেমন- কমলা, মালটা, হলুদ আপেল, কলা, লেবু, জাম্বুরা, পাকা আম, পিচ, ফুট, কাঁঠাল, আনারস, পেঁপে, নাশপাতি ইত্যাদি।
●হলুদ ও কমলা সবজি হল মিষ্টি আলু, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি কর্ন, হলুদ মরিচ, হলুদ টমেটো, ভুট্টা, হলুদ ক্যাপসিকাম, হলুদ বিট ইত্যাদি।
এ ধরনের ফলমূল ও সবজিতে লাইকোপেন, ক্যারোটিনয়েডস ও বায়োফ্লাভিনয়েডস থাকে। এ সকল সবজি প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তো কমবেই সাথে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়বে,সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে, দেহে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে, চোখের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, দাঁতের ক্ষয়জনিত সমস্যা এড়াতে ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা মোকাবিলা করতেও প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় কিছু লাল, কমলা ও হলুদ রঙের ফল ও সবজি রাখা প্রয়োজন।ডায়েটে হলুদ ফল এবং শাকসবজি যেমন কুমড়া, লেবু, পেঁপে, কমলা, আমের, তরমুজ, ক্যাপসিকাম, কর্ন, আনারস ইত্যাদি যোগ করে আপনি কেবল আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারবেন না তবে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ডায়াবেটিস এবং নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।ফলের মধ্যে কমলালেবু ও আঙুরে বায়োফ্লেভোনয়েড থাকে, যা ভিটামিন সি-র সঙ্গে যুক্ত হয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে।
সাদা রঙের ফলমূল ও শাকসবজিঃ ( সাদা বিষ করে দূর )
●ফল এবং সবজির তালিকায় রয়েছে সাদা জাম,কলা, সাদাপীচ, নাশপাতি, পেঁয়াজ, রসুন, মুলা, মাশরুম, সেলারি, আলু, ফুলকপি, শালগম ইত্যাদি।
ফলমূল ও সবজির ভিতর সাদা রঙের সবজিগুলোকে এক প্রকার অবহেলিতই বলা চলে। কেননা এগুলো আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় স্থান পেতে বেশ কম দেখা যায় । সাদা রঙের সবজির মধ্যে রয়েছে মূলা, রসুন,
পেঁয়াজ, মাশরুম ইত্যাদি। কিন্তু অবহেলিত এই সাদা রঙের খাবারগুলো আমাদের সুস্থতায় দারুণ ভূমিকা রাখে। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াবিরোধী ক্ষমতা আছে সাদা সবজি কিংবা ফলে। সাদা রঙের রসুনে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে তা শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে পারে।এ ধরনের সবজিগুলো সাধারণত রক্তের খারাপ কোলেস্টরল( LDL) এর পরিমাণ কমায়, শরীরের বিষাক্ত পদার্থগুলো কে বের করে দিতে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে।
সবুজ রঙের ফল ও শাকসবজিঃ ( সবুজ খেলে বাড়বে সতেজতা )
●সবুজ ফলের যেমন- পেয়ারা, সবুজ আঙুর, সবুজ আপেল, কামরাঙা, লেবু, বরই, আমড়া, আমলকি, জলপাই, কাঁচা আম, অ্যাভোকাডো, কিউই, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি।
● সবুজ পাতাযুক্ত শাক-সবজির যেমন- পুঁইশাক, পালংশাক, লেটুসপাতা, পুদিনাপাতা, ব্রোকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি,শতমূলী, শসা, কাঁচামরিচ, সবুজ মটরশুটি, সবুজ মরিচ ইত্যাদি রয়েছে।
সবুজ পাতাযুক্ত সবজির মধ্যে পালং, বিভিন্ন সবুজ শাক, পাতাকপি, ফুলকপি, মটরশুঁটির মতো খাবার প্রতিদিন খাওয়া উচিত। সবুজ রঙের শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়, দৃষ্টিশক্তি প্রখর রাখে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়,ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে, বয়সের সাথে সাথে শরীরে যে ক্ষয়জনিত সমস্যা দেখা দেয় তা প্রতিরোধ করে। সবুজ সবজি ভিটামিন এ, সি, ই, কে ও কয়েক ধরনের ভিটামিন বি-এর উৎস। এতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, লৌহ ও পটাশিয়াম থাকে। সবুজ পাতাযুক্ত সবজির রং যত গাঢ় হয়, এতে তত বেশি পুষ্টি থাকে। রোগ প্রতিরোধে সবুজ শাকসবজির কোনো বিকল্প নেই।এছাড়াও সবুজ ফলমূল ও সবজিতে ফলিক এসিড পাওয়া যায় যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রয়োজনীয় এবং অনাগত শিশুর জন্মগত ত্রুটির বিরুদ্ধে লড়াই করে। আবার রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতেও কাজ করে সবুজ রঙের শাকসবজি।
আমাদের সকলের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ফল বা শাকসবজি রাখা উচিত। ছোট বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন রঙের ফল ও সবজি প্রয়োজন মত খাওয়ানো উচিত। শীতে প্রচুর সবজি বাজারে পাওয়া যায়। পুষ্টিকর খাবার সব সময়ই শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এ সময় তাই বেশি করে শাকসবজি খেতে হবে। এতে শরীর যথেষ্ট পুষ্টি পাবে এবং রোগব্যাধি কমবে।
বাড়িতে সকলের সঙ্গে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আনন্দই আলাদা। এইদিনে বিশেষ রান্না কিছু করতে চাইলে ট্রাই করতে পারেন এই সব রেসিপি-
তেরঙ্গা পোলাও–
- উপকরণ- ১ কাপ বাসমতি রাইস (ভিজিয়ে জল ফেলে দিন), ২ চামচ ঘি, আধের একটু বেশি চামচ জিরে, এক চা চামচ আদা পেস্ট, আধ কাপ টমাটো ও কাশ্মীরি লঙ্কার পেস্ট, আধ কাপ হলুদ, আধ কাপ লাল কাশ্মীরি লঙ্কা, নুন, পালংপাতা।
- প্রণালী- ভাতে গেরুয়া রঙ আনতে প্রথমেই হালকা করে জিরে ভেজে নিন। তা ঢেলে দিন সাদা ভাতে। বাকি সাদা ভাতের একটা অংশ সবুজ ভাতের জন্য রাখুন। অন্য অংশ সাদা ভাত হিসাবে রেখে দিন। এরপর আরেকটি পাত্রে ধনে ভেজে নিন। আদা, লাল লঙ্কার পেস্ট তাতে দিয়ে রঙ আনুন গেরুয়ার দিকে। এতে দিন নুন, টমাটো পেস্ট ও অল্প জল। খানিকক্ষণ ঢাকনা চাপা দিয়ে রেখে দিন। মশলা হয়ে গেলে তা ভাতে মিশিয়ে দিন। অন্যদিকে, ধনে, কাঁচালঙ্কা, পালং পাতা দিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে তা ফুটিয়ে নিন। তাতে অল্প নুন দিন। আর সেই পিউরি ভাতে দিয়ে অল্প জল দিয়ে একটু ফুটিয়ে নিন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল তিনটি রঙের ভাত। পর পর লেয়ার করে এই পোলাওকে তিরঙ্গার রঙ দিয়ে সাজিয়ে দিন প্লেটে।।।
তেরঙ্গা ইডলি –
- ইডলির তৈরির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যাটার নিন এবং তিনটি সমান ভাগে ভাগ করুন। সাদা রঙের ইডলির জন্য এক অংশ আলাদা করে রাখুন। কিছু টমেটো টুকরো টুকরো করে কেটে নিন, সেগুলি এবং লাল লঙ্কা দিয়ে কয়েক মিনিট রান্না করুন। এটিকে ঠাণ্ডা করে একটি মসৃণ তৈরী করে পেস্ট করে নিন এবং তারপর কমলা রঙের ইডলি তৈরি করতে ব্যাটারের এক অংশের সাথে মিশিয়ে নিন। সবুজ রঙের ইডলির জন্য ধনে বা পুদিনা পাতা এবং কাঁচা মরিচ ব্যবহার করতে পারেন , তারপর সমান পরিমানে সাজিয়ে তৈরী করুন তিন রঙা ইডলি ।
স্বাধীনতার 75 বছর পরে আমরা সবাই স্বাধীনভাবে খাদ্য তালিকা প্রয়োজন অনুপাতে তৈরি করে নিতেই পারি। শুধুমাত্র খেয়াল রাখতে হবে সেই খাদ্যতালিকাতে সমস্ত খাদ্য উপাদান যেন থাকে। প্রত্যেক ঘরের শিশুরা যেদিন সুষম আহার খেয়ে অপুষ্টিতে মারা যাবেনা, সেইদিন আমাদের জয় হবে। এই 75 বছরে আমাদের অনেক পরিবর্তন হয়েছে আরও অনেক পরিবর্তন আনতে এখনো অনেক লড়াই বাকি …।
Dietician (9 yrs experience in Maternal & Child Health) Formerly attached with Bansgarh Rural hospital , Purulia ( 2013 Feb to 2022 Apr) Bhagirothi Neotia women and child care center, Park Street, Kolkata AMRI , Chakuri, kolkata