ভিটামিন ই হল ফ্যাট দ্রবীভূত ভিটামিন গুলোর মধ্যে একটি যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট – ও বটে, এই প্রয়োজনীয় পুষ্টিগত উপাদান টি ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এটি প্রাকৃতিক ভাবে অনেক খাদ্য বস্তুতে পাওয়া যায় এবং এর একটি বিশেষ দিক হলো যতক্ষণ প্রয়োজন না হয়, ততক্ষণ এই ভিটামিন দেহেই মজুদ থাকে। ভিটামিন ই’তে যে আটটি বিভিন্ন যৌগ পদার্থ আছে, তাদের মধ্যে অন্যতম সক্রিয় হল আলফা-টোকোফেরল। এই যৌগটি চামড়ার স্থিতিস্থাপকতা (ইলাস্টিসিটি) বজায় রাখে, ফলে ত্বকের ক্ষয়ক্ষতি এবং অকাল বার্ধক্য বা বলি রেখাও এড়ানো যায়, ভিটামিন ই চুলের অনেক উপকারে লাগে। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের প্রতি দিন ৭.৫ থেকে ১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন E এর উৎস
প্রাণীজ উৎস – স্যালমন মাছ ,সামুদ্রিক খাদ্য, চর্বিহীন মাংস, ডিম ইত্যাদি ।
উদ্ভিজ উৎস – বাদাম, চিনাবাদাম, হ্যাজেল নাট, ফিলবার্ট বাদাম, পাইন বাদাম, আখরোট সয়াবিন,অ্যাভোকাডো । সবুজ শাক-সবজি যেমন (পালং, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, কাঁচা শালগম, কয়েক ধরেনের মরিচ, মটরশুঁটি এবং লেবু) এছাড়াও, উদ্ভিজ্জ তেল,যেমন সূর্যমুখী তেল, কুসুম ফুলের তেল, ভুট্টা, সয়াবিন তেল, গমের তেল।
ভিটামিন E এর প্রয়োজনীয়তা
ভিটামিন ই মূলত আমাদের শরীরের কোষকে সুস্থ রাখতে কাজ করে। ত্বকের এবং চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করা ছাড়াও ভিটামিন ই’র আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। ভিটামিন-ই ক্যান্সার, হার্ট সম্পর্কিত রোগ এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে কাজ করে। ভিটামিন ই আমাদের চোখের জন্য খুব দরকারী। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে লড়াই করে ভিটামিন ই দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উদীপ্ত করে। এছাড়াও, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হওয়ার কারণে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ এবং পদ্ধতিকে সুরক্ষা প্রদান করে। এছাড়াও, ভিটামিন কে’র ব্যবহারে ভিটামিন ই’র সহযোগিতা থাকে।
প্রাণবন্ত ত্বকের জন্য: ত্বকের জন্য আদর্শ সম্পূরকগুলির মধ্যে ভিটামিন ই অন্যতম। আর্দ্রতা বজায় রেখে ত্বককে শীতল রাখে, যা ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। ব্রণ এবং ত্বকে বার্ধক্যের চিহ্ন আসাও প্রতিরোধ করে।
লম্বা ও স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য: ভিটামিন ই চুলের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে। চুলের প্রাকৃতিক তেলগুলি বজায় রেখে ভিটামিন ই চুলকে লম্বা ও উজ্জ্বল করে তোলে।
দৃষ্টি শক্তি উন্নত করে: দৃষ্টি সংরক্ষণ এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ প্রয়োজন। ভিটামিন ই বার্ধক্য -জনিত চক্ষু সমস্যা, যেমন ছানি এবং ম্যাকুলার ক্ষয় রোধ করে।
ডিমেনশিয়ার প্রতিরোধ: ভিটামিন ই’এর অভাব ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ) এবং আল্জ্হেইমের রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে ভিটামিন ই’র সম্পূরকতা আলজাইমার ক্ষেত্রে চেতনার উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে।
হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে: প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হওয়ার কারণে ভিটামিন ই হৃদ যন্ত্রের পেশিগুলিকে শক্তিশালী করে এবং ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা কম করে। ফলে হার্ট এ্যাটাক এবং স্ট্রোক’এর সম্ভাবনা কম হয়।
ভিটামিন E -এর অভাবজনিত লক্ষন
১. স্নায়ুর সমস্যা, পেশী দুর্বলতা, পেশী এসাড় হয়ে আসা, পেশির মধ্যে ভারসাম্য না থাকা, ঠিক করে হাঁটতে না পারা
২. ঘন ঘন সর্দি, কাশি, প্রায়শই জ্বর, শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা অর্থাৎ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
৩. রেটিনায় সমস্যা যার ফলে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া, ঝাপসা দেখা
৪. শরীরে হালকা রক্তশূন্যতা
ভিটামিন E -এর রিকমেন্ডেড ডোজ
ভিটামিন ই’র মাত্রা বয়স, ওজন, উচ্চতা, লিঙ্গ এবং অন্যান্য বিষয়ের উপরে নির্ভর করে । দৈনিক মাত্রা, 14 বছর এবং তার বেশি বয়সীদের জন্য প্রতিদিন15 মিলিগ্রাম আলফা-টোকোফেরল ( 1 আইইউ হচ্ছে 0.9 মিলিগ্রাম টোকোফেরল’এর সমান )
প্রাকৃতিক ভিটামিন ই খাদ্যের মধ্যে পাওয়া যায়। কৃত্রিম ভাবেও ভিটামিন ই নেওয়া সম্ভব যেমন ক্যাপসুল যা শুধু চিকিৎসকের পরামর্শেই নিতে হবে, নয়তো এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে ।
ভিটামিন E -এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যে ভিটামিন ই এর পরিমাণ আমাদের দেহকে সুস্থ রাখতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে, সেই ভিটামিন ই এর অত্যধিক পরিমাণ আমাদের দেহকে ক্ষতিগ্রস্ত করতেও পারে। প্রয়োজনের থেকে বেশি খাওয়া হলে, এটি শরীরের মধ্যে জমা হতে শুরু হয়। কারণ এটি চর্বিযুক্ত দ্রবণীয়। এটি কে মূত্রনালীর মাধ্যমে শরীর থেকে অপসারণ করা যায় না। এটি ধীরে ধীরে শরীরে একটি বৃহৎ স্তরের সংশ্লেষ পায় এবং খাদ্যদ্রব্যর মাধ্যমে এই ভিটামিন ই সাধারণ ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এতে অনেক অসুবিধের সৃষ্টি হয় যেমন,
- বমি বমি ভাব
- অবসাদ
- উদরাময
- মাথা ব্যথা
- ঝাপসা দৃষ্টি
- রক্তক্ষরণ
- ফুসকুড়ি
- দুর্বল হাড়
- পেট ব্যাথা
তাই ভিটামিন ই নেওয়ার আগে এবং নেওয়ার সময় যে বিষয়গুলি মনে রাখতে হবে,
১. মধুমেহ ( ডায়াবেটিস ) রোগ থাকলে ভিটামিন ই নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, না হলে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে ।
২. যাদের হৃদরোগ বা স্ট্রোক হওয়ার ইতিহাস আছে, তাদের ভিটামিন ই নেওয়া যাবে না, না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে ।
৩. যাদের রক্তক্ষরণের সমস্যা আছে, তাদের ভিটামিন ই নেওয়া যাবে না । কারণ ভিটামিন ই রক্তকে তরল করে দেয়, ফলে হেমারেজের সম্ভাবনা থাকে।
Health And Wellness Blogger.