ভিটামিন ডি হল ফ্যাট দ্রবীভূত ভিটামিন , আমাদের শরীরের যে পরিমানে ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন তার মাত্র ১০% খাদ্য থেকে পাওয়া যায় বাকি ৯০% আমাদের ত্বকে উপস্থিত ভিটামিন ডি এর প্রিকারসার ৭ – ডিহাইড্রোকোলেস্টেরল সূর্যালোকের সংস্পর্শে ভিটামিন ডি তে রুপান্তরিত হয় । ভিটামিন ডি দুই প্রকারের হয় –
ভিটামিন ডি ২ ( Vitamin D2 ) – উদ্ভিজ উৎসে প্রধানত ভিটামিন ডি ২ পাওয়া যায় ।
ভিটামিন ডি ৩ ( Vitamin D3 ) – প্রাণীজ উৎস অথবা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ভিটামিন ডি ৩ পাওয়া যায় ।
ভিটামিন ডি এর উৎস
প্রাকৃতিক উৎস – ভিটামিন ডি এর প্রধান প্রাকৃতিক উৎস হলো সূর্যের আলো। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে, বিশেষত UV-B রশ্মি বা অতিবেগুনী রশ্মি বিকিরণের মাধ্যমে, ত্বকে উপস্থিত ভিটামিন ডি এর প্রিকারসার ৭ – ডিহাইড্রোকোলেস্টেরল সূর্যালোকের সংস্পর্শে ভিটামিন ডি তে রুপান্তরিত হয় । যখন শরীর অনাবৃত থাকে তখন ত্বকের কোশ বা, এপিডার্মিস,সূর্যালোককে ফোটোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ভিটামিন ডি -এ পরিবর্তিত করে। যা বাহিত হয়ে শরীরের কোশে এবং যক্কৃতে সঞ্চিত হয়।
অন্যান্য উৎস
- ডিমের সাদা অংশ
- ছোট চিংড়ি
- টুনা, হেরিং এবং সামন জাতীয় মাছ
- ফ লিভার
- কড লিভার অয়েল
- চিজ
- অয়েস্টার
- দুধ, সয়ামিল্ক এবং তা থেকে প্রাপ্ত পণ্য
- ওটমিল জাতীয় কিছু প্যাকেজ করা খাদ্য
ভিটামিন D এর কাজ
ভিটামিন D হাড়, দাঁত এবং পেশি শক্ত করতে, মহিলা দের নানান রোগ উপশম করতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি দাঁত ও হাড়ের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমকে কার্যকরী করে তোলে।
হাড় শক্ত করে – শরীরের ফসফরাসের মধ্যে ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য প্রয়োজন হয় ভিটামিন ডি এর, যা হাড়ের মূলগত গঠন তৈরি করে।
শিশুদের জন্য উপকার – শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের হাড়ের বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন ডি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
মহিলাদের জন্য উপকার – ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট মহিলাদের ঋতুস্রাবজনিত উপসর্গের উন্নতি ঘটায় এবং মহিলাদের অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়, বিশেষত ঋতুস্রাবত্তর মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষ কাজ দেয়।
দাঁত শক্ত হয় – ভিটামিন ডি শিশু এবং বয়স্কদের দাঁতের ক্ষয়রোধ করে। এটি দাঁতের মিনারেলের উন্নতি ঘটায় এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।
পেশির শক্তি বাড়ায় – শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ভিটামিন ডি পেশির শক্তিবৃদ্ধি করে এবং পেশি বাড়ায়। শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও এটির ইতিবাচক ভূমিকা আছে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে – ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য খিদে কমায় বলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। পরিশ্রমের ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্লান্তি কমায় বলে ওজন কমায়।
ভিটামিন D এর অভাবজনিত লক্ষন
সাধারন লক্ষণ : হাড়, পেশিতে দুর্বলতা এবং ব্যথা, অস্থিসন্ধিগুলির বিকৃতি এবং দীর্ঘস্থায়ী পিঠে ব্যথা ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির সাধারণ লক্ষণ হতে পারে। শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম হলে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ দেখা দিতে পারে, যা ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
- বিশ্বব্যাপী আনুমানিক এক বিলিয়ন মানুষের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি রয়েছে। ইউরোপীয় জনসংখ্যায় ভিটামিন ডি-এর অভাব সবথেকে বেশি।
- শিশুদের মধ্যে তীব্র ভিটামিন ডি এর অভাবে রিকেটস রোগ, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অস্টিওম্যালাসিয়া রোগ হয়। রিকেটস রোগের ফলে হাড় নরম ও দুর্বল হয়ে যায়।
- এছাড়াও সাধারণত পর্যাপ্ত সূর্যালোকের অভাবে রক্তে ক্যালসিফেডাইওল ( 25-হাইড্রোক্সি-ভিটামিন ডি) এর ঘাটতি হয়।
- এছাড়াও, শরীরে এই D ভিটামিন কম থাকলে স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি হ্রাস পায়। ভিটামিন ডি – র অভাবে বেশি বয়সে মানুষের স্বাদ ও গন্ধ হারিয়ে ফেলার হার, একজন সুস্থ ব্যক্তির তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি হয়।
ভিটামিন D এর দৈনিক চাহিদা
শরীরের প্রয়োজন এবং চাহিদার ওপর ভিটামিন ডি -এর ডোজ নির্ভর করে এবং তা লিঙ্গ, বয়স, চিকিৎসার পরিস্থিতি এবং এলাকা বা ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
ICMR ২০২০, এর তথ্য অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দৈনিক ভিটামিন ডি ( Vitamin D ) এর চাহিদা ৬০০ IU , প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের ৬০০ IU এবং গর্ভবতী মহিলাদের ৬০০ IU ।
ভিটামিন ডি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
দীর্ঘদিন ধরে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট ব্যবহারের কারণে কিছু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়, যেমন…
১. ক্লান্তি
২. মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা
৩. ক্ষুধামান্দ্য
৪. বমি ভাব বা বমি
৫. মুখ শুষ্ক
৬. স্বাদের পরিবর্তিত অনুভূতি
৮. বুকে ব্যাথা
৯. চামড়াতে ফুসকুড়ি
১০.অত্যধিক পরিমাণে ভিটামিন ডি গ্রহণে হাইপারক্যালসেমিয়া ( যার লক্ষণ পেশির ব্যথা, দিগভ্রান্তি এবং বিভ্রান্তি, পেশির দুর্বলতা এবং চরম ক্লান্তি এবং তৃষ্ণা), বৃক্কের (কিডনি) ক্ষতি বা বৃক্কে পাথর হতে পারে।
Health And Wellness Blogger.