ভিটামিন সি

ভিটামিন সি ( Vitamin C ) – এর উৎস, অভাবজনিত লক্ষণ ,কাজ ও প্রয়োজনীয়তা

ভিটামিন সি ( Vitamin C ) হল, জলে-দ্রবণীয় ভিটামিন, যার রাসায়নিক নাম অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। এটি একটি জৈব অম্ল, এই সাদা দানাদার পদার্থ টি মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। যেহেতু এটি প্রাকৃতিক ভাবে আমাদের শরীরে তৈরি হয় না, তাই খাদ্যের সাথে একে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া প্রয়োজন। ভিটামিন সি, খাদ্য-গত সম্পূরক হিসাবেও পাওয়া যায়। এর অন্যতম কাজ হল দেহের জন্য প্রয়োজনীয় কোলাজেন তন্তুর জৈব সংশ্লেষণ (বায়োসিন্থেসিস)। এই ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, ত্বক ও চুলের যত্নেও এর জুড়ি নেই।

ভিটামিন সি এর উৎস 

উল্লেখ্য, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য কাঁচা খেতে হয়, কারণ রান্না বা গরম করলে এদের পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিন সি’র পরিমাণ হ্রাস পায়। একই ভাবে, দীর্ঘ দিন এদের মজুদ করে রাখা অথবা সূর্যালোক লাগানো উচিৎ নয়। এই ফল এবং সবজিগুলি তাজা এবং রান্না না করা অবস্থায় ধুয়ে নিয়ে খাওয়া সবচেয়ে ভাল।

  • কমলা, লেবু, মিষ্টি লেবু, আঙুরের মত সাইট্রাস ফল ।
  • স্ট্রবেরি, গুজবেরি, ব্লুবেরি, রাস্পবেরী এবং ক্র্যানবেরীর মত বেরি ।
  • ফুটি এবং তরমুজ ও খরমুজ ।
  • আনারস, পেয়ারা , আম, পেঁপে ।
  • ব্রোকলি, লাল মরিচ, সবুজ মরিচ এবং ফুলকপির মত সবজি, টমেটো ।
  • সবুজ শাক, পালং, বাঁধাকপি এবং শালগম ।
  • মিষ্টি এবং সাদা আলু ।
  • কিছু প্যাকেজ খাবার যেমন ডালে ভিটামিন সি থাকে ।
  • এছাড়াও ক্যাপসুল, ট্যাবলেট এবং কৃত্রিম পরিপূরক হিসাবে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
vitamin c source

ভিটামিন সি এর উৎস

মাড়ির উপকার: ভিটামিন সি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উদীপ্ত করে মাড়িতে কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, মাড়ির রক্তক্ষরণ এবং সংক্রমণ রোধ করে।

ক্ষত নিরাময় ত্বরান্বিত করে: ভিটামিন সি একটি উৎকৃষ্ট ক্ষত নিরাময়-কারী যৌগ। শুধু ক্ষতের সংক্রমণই রোধ নয়, ভিটামিন সি ক্ষত-মুখ বন্ধ করতে এবং ত্বকে ক্ষতের দাগ হ্রাস করতে সহায়তা করে।

ত্বকের উপকারী: সূর্যের তাপে ঝলসে যাওয়া ত্বকের নিরাময়ের জন্য খাওয়ার ওষুধে এবং স্থানীয় ভাবে প্রলেপ দেওয়ার ওষুধে ভিটামিন সি ব্যবহার করা হয়। কোলাজেন এবং ইলাস্টিন তৈরিতে ভিটামিন সি’র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এই কোলাজেন এবং ইলাস্টিন চামড়ার টান-টান ভাব এবং স্থিতিস্থাপকতা (ইলাস্টিসিটি) উন্নত করে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণের জন্য ভিটামিন সি দেহে বয়সের ছাপ পড়াকে দূরে রাখে।

ওজন হ্রাসে সহায়তা করে: ভিটামিন সি একটি প্রাকৃতিক যৌগ, যা ওজন হ্রাসে সহায়তা করে। এটি শরীরের বাড়তি চর্বি পুড়িয়ে ফেলতে সাহায্য করে এবং বিপাক ক্রিয়ার উন্নতি করে, ওজন হ্রাসে সহায়তা করে।

দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করে: ভিটামিন সি দেহের প্রতিরক্ষার কোষগুলিকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে উদীপ্ত করে এবং অক্সিডেটিভ চাপ হ্রাস করে। এতে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়। 

স্মৃতি শক্তির উন্নতি করে: ভিটামিন সি এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ, প্রদাহ এবং মস্তিষ্কে ফ্রি-র‍্যাডিক্যাল জনিত ক্ষতি হ্রাস করে। এই কাজগুলি না হলে বয়স-সম্পর্কিত স্মৃতি হ্রাস এবং জ্ঞানের হ্রাস হতে পারে।

 ভিটামিন সি এর অভাবজনিত লক্ষন

দেহে ভিটামিন সি এর ঘাটতি হলে তাত্‍ক্ষণিকভাবে বোঝা যায় না। দীর্ঘদিন পর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। তাই ভিটামিন সি জাতীয় খাবারের প্রতি অনেকেই কম গুরুত্ব দেন। কিন্তু এর ফলেই অনেক সমস্যা দেখা যায়। যেমন, 

    • ফ্যাকাশে ত্বক এবং বিবর্ণ চুল : ত্বকের লাবণ্যতা ধরে রাখে ভিটামিন সি। ভেতর থেকে ত্বক রাখে কোমল ও মসৃণ ও চুল রাখে মজবুত। ভিটামিন সি এর অভাবে ত্বক খসখসে ও ফ্যাকাশে, চুলের রং পরিবর্তন হয়ে লালচে হয়ে যায়। শীতকালে অনেকেরই ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। এই সমস্যা কেবল আবহাওয়ার শুষ্কতার কারণেই না, ভিটামিন সি এর অভাবেও হতে পারে। এবং, চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়, ফলে অতিরিক্ত চুল ঝরে।

   • ঠান্ডার সমস্যা : ঠান্ডা, কাশি, জ্বরজ্বর ভাব, গলাব্যথা- এই সমস্যাগুলো সাধারণ সমস্যা হলেও, ভিটামিন সি এর অভাব ঘটলে এই সমস্যাগুলো বেশি হয়। কারণ জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা তখন শরীরের থাকে না। ফলে ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা দেয়।

    • অ্যানিমিয়া দেখা দেয় : অল্প কাজ করেই হাঁপিয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ, মাথাব্যথা, হঠাত্‍ চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি সমস্যাগুলো অ্যানিমিয়ার লক্ষণ। ভিটামিন সি এর অভাবে অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে। 

   •  দাঁতের সমস্যা : ভিটামিন সি এর অভাবে সামান্য আঘাতে মাড়ি দিয়ে রক্ত ঝরা কিংবা দাঁতের রং হলুদ হয়ে যাওয়া, ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয়।

     এছাড়াও, শরীরে ভিটামিন-সি-এর ঘাটতি হলে বিরক্তিভাব দেখা দেয়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, ওজন কমে যায়। এমনকি গিঁটে ব্যথা বা পেশিতে ব্যথার সমস্যা হয়।

ভিটামিন সি -এর দৈনিক চাহিদা

ব্যক্তিগত উচ্চতা, ওজন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপরে নির্ভর করে ভিটামিন সি  এর পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে। তবে, মহিলাদের প্রতিদিন ৭৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি সেবন করা উচিত, এবং, পুরুষদের পক্ষে পরিমাণটা ৯০ মিলিগ্রাম।মহিলাদের জন্য উপরোক্ত পরিমাণ ছাড়াও গর্ভবতী এবং স্তন্যদায়ী মা’দের অতিরিক্ত ভিটামিন সি দরকার। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভিটামিন সি’র প্রয়োজনীয় দৈনিক মাত্রা 85 মিলিগ্রাম। স্তন্যদায়ী মা’দের 125 মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করা উচিত ।

ভিটামিন সি -এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

১. বমি বমি ভাব

২. উদরাময়

৩. পেট ব্যথা

৪. পেট খারাপ

৫. দাঁতের এনামেল’এর ক্ষয় এতে দাঁতের সংবেদনশীলতা বা ব্যথা অনুভূত হয় 

৬. এছাড়াও, অনেক সময় এলার্জি  হতে দেখা যায় 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

You cannot copy content of this page

Scroll to Top