ভিটামিন বি৭ ( Vitamin B7 ) – এর উৎস, অভাবজনিত লক্ষণ, কাজ ও দৈনিক চাহিদা

ভিটামিন বি৭ ( Vitamin B7 ) হল মানব দেহের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় আটটি B ভিটামিন গুলোর মধ্যে একটি যার রাসায়নিক নাম বায়োটিন বা ভিটামিন এইচ (H) নামেও পরিচিত। এই জলে-দ্রবণীয় ভিটামিন শরীরের ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন বিপাক করতে সাহায্য করে। সেইসাথে এই ভিটামিন বি 7 অ্যামিনো অ্যাসিডের সংশ্লেষণ বা, প্রোটিন সংশ্লেষণ করতে পারে। ত্বক ও দৃষ্টিশক্তির উন্নতি, সর্বোপরি একটি স্বাস্থ্যকর স্নায়ুতন্ত্র বজায় রাখা এবং ডায়াবেটিস পরিচালনার মতো অনেক স্বাস্থ্য এর সুবিধার জন্য ভিটামিন বি 7 অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তবে স্বাভাবিক খাদ্যের অংশ ছাড়াও মাত্রাতিরিক্ত বায়োটিন গ্রহণ করলে বায়োটিন বিপাকীয় মূত্রত্যাগ হয়। 

ভিটামিন বি৭ ( Vitamin B7 ) এর উৎস 

প্রাণিজ উৎস – স্যামন, টুনা, সার্ডিন মাছ ও ঝিনুক, শুকরের মাংস, ডিম, দুধ এবং পনির ।

উদ্ভিজ উৎস – গাজর, ফুলকপি, পালং শাক, ব্রকলি, মাশরুম, মিষ্টি আলু , কলা, অ্যাভোকাডো, রাস্পবেরি, বাদাম, চিনাবাদাম, আখরোট এবং বীজ যেমন সূর্যমুখী বীজ এবং চাল, গম এবং ওটস ।

ভিটামিন বি৭ ( Vitamin B7 ) এর প্রয়োজনীয়তা

ভিটামিন B7 মূলত একটি স্বাস্থ্যকর স্নায়ুতন্ত্র বজায় রাখে এবং ডায়াবেটিস পরিচালনার জন্য এর জুড়ি মেলা ভার। সবিস্তারে লক্ষ করলে দেখা যায়, ভিটামিন বি৭ ( Vitamin B7 ) -এর আরো অনেক প্রয়োজনীয়তা আছে। যেমন, 

বিপাক ক্রিয়া – ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন বিপাক করার জন্য বায়োটিন বা B7 -এর প্রয়োজন হয়।

ত্বক, নখ এবং চুলের স্বাস্থ্য – ভিটামিন বি৭ ( Vitamin B7 ) চুল, ত্বক এবং নখের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ত্বকের ক্ষেত্রে, এটি ত্বকের গঠন উন্নত করে, ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে ও ময়শ্চারাইজ করে এবং বার্ধক্যের বিভিন্ন লক্ষণ যেমন বলি, সূক্ষ্ম রেখা, দাগ, কালো বৃত্ত ইত্যাদি কমায়। চুলের ক্ষেত্রে, বায়োটিন চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত মজবুত করে, চুলের স্বাভাবিক রং ধরে রাখে, চুল ভেঙ্গে যাওয়া ও চুল পড়া রোধ করে। নখের ক্ষেত্রে, নখের গুণমান উন্নত করে এবং নখ এর ভঙ্গুর প্রতিরোধ করে। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ – বায়োটিন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করে এবং বিটা-অগ্ন্যাশয় কোষ থেকে ইনসুলিনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস পায়। এছাড়াও এটি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে – ভিটামিন ভিটামিন বি৭ ( Vitamin B7 ) মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে, মস্তিষ্কের কোষগুলিকে মেরামত করতে সাহায্য করে যার ফলে বিষণ্নতা, সিজোফ্রেনিয়া, হ্যালুসিনেশন ইত্যাদির মতো সাইকোটিক অবস্থার চিকিৎসা করতে সুবিধা হয়। বায়োটিন প্রতিক্রিয়াশীল বেসাল গ্যাংলিয়া রোগেরও চিকিৎসা করে এভাবে স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থ কার্যকারিতা বজায় থাকে। 

গর্ভাবস্থায় ভিটামিন বি৭ ( Vitamin B7 ) – গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করতে বায়োটিন অপরিহার্য। বায়োটিন বিকাশমান ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটিগুলি এড়াতে, এবং গর্ভবতী মায়ের মধ্যে ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।

রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রন – বায়োটিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তের গ্লুকোজ কমাতে পারে এবং বায়োটিন অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিনের নিঃসরণকে উদ্দীপিত করতে পারে যা পরবর্তীতে রক্তের গ্লুকোজ কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও, বায়োটিন কিডনির সমস্যায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে সহায়ক। এটি কার্যকরভাবে ডায়ালাইসিসের সময় পেশী ক্র্যাম্প এবং ব্যথা কমায়। এটি দৃষ্টিশক্তির উন্নতি, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, শিশুদের ক্র্যাডল ক্যাপ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের মতো অটো-ইমিউন রোগের মতো অবস্থার চিকিৎসার জন্যও উপকারী।

তাছাড়া ভিটামিন B7 ফ্যাটি অ্যাসিড সংশ্লেষণ বা তৈরি করে, সাথে অ্যামিনো অ্যাসিড আইসোলিউসিন এবং ভ্যালাইন সংশ্লেষণ করে এবং গ্লুকোনোজেনেসিস, বা গ্লুকোজ তৈরি করা ।

ভিটামিন বি৭ ( Vitamin B7 ) এর অভাবজনিত লক্ষন

  • চুল পড়া বা অ্যালোপেসিয়া ।
  • চোখ, নাক, মুখ এবং যৌনাঙ্গের চারপাশে আঁশযুক্ত, লাল ফুসকুড়ি ।
  • হাত ও পায়ে অসাড়তা এবং ঝাঁকুনি ।
  • বিষণ্ণতা ও অলসতা এবং হ্যালুসিনেশন ।
  • অ্যাটাক্সিয়া বা শারীরিক নড়াচড়ার নিয়ন্ত্রণ হারানো।
  • দুর্বল ইমিউন ফাংশন ।
  • ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি, এছাড়াও গর্ভাবস্থায় বায়োটিনের সবচেয়ে বেশি ঘাটতি দেখা যায়। 

ভিটামিন বি৭ ( Vitamin B7 ) এর দৈনিক চাহিদা

বায়োটিনের জন্য কোনো সরকারী সুপারিশকৃত দৈনিক মাত্রার নির্দেশিকা নেই। তবে, 19 বছর বা তার বেশি বয়সী পুরুষ ও মহিলাদের জন্য এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভিটামিন B7 এর মাত্রা 30 মাইক্রোগ্রাম হওয়া উচিত। এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য দৈনিক 35 মাইক্রোগ্রাম প্রয়োজন।

ভিটামিন বি৭ ( Vitamin B7 ) এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ভিটামিন বি৭ ( Vitamin B7 ) এর সেরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকলেও বায়োটিনের উচ্চ মাত্রা স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও ভিটামিন বি৭ ( Vitamin B7 ) এর জন্য কোনো সরকারী সুপারিশকৃত দৈনিক মাত্রার নির্দেশিকা নেই। তবুও, কোনো প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিদিন 30 এমসিজি এর বেশি বায়োটিন গ্রহণ করলে তা, ত্বকে অ্যালার্জির কারণ হতে পারে যেমন ফুসকুড়ি, ফ্লাশ এবং চুলকানি, যা বুকে পৌঁছালে অ্যানাফিল্যাক্সিস পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও, এর ওভারডোজের অন্যান্য লক্ষণগুলো হলো –

 ১.অত্যধিক তৃষ্ণা পাওয়া

 ২. প্রস্রাব এ সমস্যা

 ৩. অনিদ্রা ।

 ৪. ভিটামিন বি6 এবং ভিটামিন সি-এর লেভেল আশংকাজনকভাবে কমে যাওয়া ।

 ৫.ইওসিনোফিলিক প্লুরোপেরিকার্ডিয়াল ইফিউশনও হতে পারে, যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী পালমোনারি সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 উল্লেখ্য, ভিটামিন বি৭ ( Vitamin B7 ) গ্লুকোজ বিপাকের জন্য দরকারী হওয়ায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বায়োটিন সম্পূরক গ্রহণ করার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page