thyroid problem in pregnancy

গর্ভাবস্থায় থাইরয়ডের সমস্যা ! জানুন, কী খাবেন আর কী খাবেন না

থাইরয়েডের সমস্যা একটি জটিল রোগ, অন্তঃসত্ত্বাদের এটি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে। সন্তান সম্ভবা হওয়ার পরপরই নারীদের থাইরয়েড পরীক্ষা করানো উচিত। তা না হলে সন্তান জন্মদানকালে জটিল সমস্যার মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে। গর্ভকালে প্রতি এক মাস-দেড় মাস অন্তর পরীক্ষা করে ওষুধের মাত্রা বারবার ঠিক করে নিতে হবে। একটি সুস্থ, নীরোগ ও মেধাবী বুদ্ধিমান সন্তান জন্ম দিতে চাইলে মায়ের থাইরয়েড সচেতনতা অপরিহার্য।

থাইরয়েড কী?

থাইরয়েড হল  একটি গ্রন্থি যা গলার দুইদিকে অবস্থিত। থাইরয়েড গ্রন্থিটি দুটি মূখ্য হরমোন T3 এবং T4 উৎপাদন করে।এই হরমোন শরীরের বৃদ্ধি, বিকাশ ও অন্যান্য কাজে সহায়তা করে থাকে। এটি হৃদস্পন্দনকে প্রভাবিত করতে পারে, এছাড়াও বিপাক প্রক্রিয়াতেও এর প্রভাব আছে।কখনও কখনও এই থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে হরমোন খুব বেশি অথবা খুব কম পরিমাণে নিঃসৃত হয়ে থাকে, আর তখনই ঘটে যায় বিপত্তি।

থাইরয়েডের সমস্যার প্রকারভেদ

থাইরয়েডের সমস্যা প্রধানত দুই ধরনের— ১) হাইপারথাইরয়েডিজ়ম (Hyperthyroidism)— এ ক্ষেত্রে রক্তে থাইরয়েড নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ২) হাইপোথাইরয়েডিজ়ম (Hypothyroidism)— এ ক্ষেত্রে রক্তে থাইরয়েড নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ কমে যায়।

প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েডের সমস্যা 

কাদের ক্ষেত্রে প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েডের ঝুঁকি বেশি থাকে – 

১. গর্ভবতী হওয়ার আগে থেকেই যেসব মহিলারা হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজমের জন্য চিকিৎসা নিয়েছেন সেসব মহিলারা এক্ষেত্রে ঝুঁকিতে থাকে।

২. পূর্বের প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েড প্রবলেম ছিল, এই অবস্থায় সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এমন মা-ও ঝুঁকিতে থাকে।

৩. হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজমের ফ্যামিলি হিস্ট্রি থাকলেও ঝুঁকি বেড়ে যায়।

হাইপারথাইরয়ডিজমের উপসর্গ (Signs of hyperthyroidism)

1.শরীরের তাপমাত্রা বেশি বোধ করা।

2.খিটখিটে মেজাজ এবং অকারণ উদ্বেগ।

3.বারবার  খেলেও ওজন কমে যাওয়া।

4.বুক ধড়ফড় করা এবং পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া।

5.রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া ।

6.অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হওয়া।

7.অতিরিক্ত ক্লান্তভাব।

8.ত্বক কালো হয়ে যাওয়া।

Thyroid test

হাইপোথাইরয়ডিজমের উপসর্গ (Signs of hypothyroidism)

1.ওজন হঠাৎ বেড়ে যাওয়া।

2.রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া এবং অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ।

3.ত্বক শুকনো হয়ে যাওয়া।

4.খাবারে অরুচি এবং খিটখিটে মেজাজ।

5.পায়ে জল জমা, চুল পড়ে যাওয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য

6.পেশি শিথিল হয়ে যাওয়া ।

থাইরয়েড থাকলে আদর্শ ডায়েট

কপার এবং আয়রন দুটোই থাইরডের মোকাবিলা করতে জরুরি। টাটকা মাংস, ওয়েস্টার, কাজু, গমের আটা, কোকতে প্রচুর পরিমাণে কপার রয়েছে। সবুজ শাকসবজি, বিন, আঁশওয়ালা মাছ, সামুদ্রিক মাছ, পোলট্রির ডিমে রয়েছে আয়রন। সেই সঙ্গেই ভিটামিন সি ব্যালান্স করতে খান লেবু, টমেটো, ক্যাপসিকাম খান। তবে থায়রয়েড বশে রাখতে স্ট্রেস কমানোর প্রয়োজন রয়েছে। তাই থায়রয়েড কমাতে মাথা ঠান্ডা রাখা জরুরি।যখন আমাদের দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন থাকে না তখন থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে পারে না। যা হাইপোথাইরয়েডিজম-এর দিকে পরিচালিত হয়ে। তাই আয়োডিন যুক্ত খাবার খেতে হবে।

কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন

বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকোলি, ছোলা জাতীয় খবার থাইরয়েড বাড়ায়। এ ছাড়াও সর্ষে, মুলো, রাঙা আলু, চিনে বাদাম এড়িয়ে চলাই ভাল। থাইরয়েড বেড়ে গেলে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার যেমন পনির, চিজ ডায়েট থেকে বাদ দিন। চিনি, রান্না করা গাজর, পাকা কলা, শুকনো ফল, মধু, ময়দার রুটি, সাদা ভাত, আলু, সাদা পাস্ত, মিষ্টি শরীরে কার্বহাইড্রেটের মাত্রা বাড়ায়। থায়রয়েড থাকলে এগুলোও কম খান। চা, কফি, চকোলেট, সফট ড্রিঙ্ক যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।

হাইপো বা হাইপার, দুই ধরনের ভারসাম্যহীনতাই মেডিসিনের মাধ্যমে ব্যালেন্স করা যায়। প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েডের সমস্যা হলে দ্রুত ট্রিটমেন্ট করতে হবে, ৩ মাস পর পর ব্লাড টেস্ট করিয়ে থাইরয়েড লেভেল চেক করতে হবে। একমাত্র আয়োডিনই থাইরয়েড রোগ থেকে বাঁচাতে পারে। সুতরাং গর্ভবতী মা এবং জন্মের পর শিশুকে আয়োডিনযুক্ত নুন খাওয়ানো জরুরি।ভয়ের কিছু নেই, তবে সচেতনতা জরুরি।ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

You cannot copy content of this page